কোমা থেকে ফিরে, গ্র্যাজুয়েশন মঞ্চে হাঁটা: অবিশ্বাস্য বেলার গল্প!

অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও সাহসের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাটের তরুণী বেলা চাম্বসিস। ২০১৮ সালে, ১৮ বছর বয়সী বেলা যখন ইস্ট হেভেন হাই স্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন, তখন তার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো ছিল সত্যিই অভাবনীয়।

শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে, মাসের পর মাস কোমায় থাকার পরও তিনি প্রমাণ করেছেন, মানুষের অদম্য ইচ্ছাশক্তি সবকিছুকে জয় করতে পারে।

বেলার জীবনটা মোটেও মসৃণ ছিল না। ২০০৯ সালে, যখন তার বয়স মাত্র ৭ বছর, এক ভয়ংকর দুর্ঘটনায় তিনি তার বড় বোনকে হারান।

এরপর, ২০১১ সালে, বাবাও একটি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা যান। এরপরও, বেলা হার মানেননি। জীবন তাকে বারবার কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন করলেও, তিনি ছিলেন অবিচল।

২০২১ সালের জানুয়ারিতে, বেলা এক বিরল রোগে আক্রান্ত হন, যার নাম ANCA-associated vasculitis। এই রোগ তার শরীরের রক্তনালীগুলোতে প্রদাহ সৃষ্টি করে।

এর ফলে তার কিডনি বিকল হয়ে যায় এবং তাকে ডায়ালাইসিস শুরু করতে হয়। এরপর, হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা অবস্থায় তিনি স্ট্রোক করেন এবং কোমায় চলে যান।

চিকিৎসকেরা পর্যন্ত আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। তাদের ধারণা ছিল, বেলা হয়তো আর কখনোই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে না।

কিন্তু বেলা ছিলেন অন্য ধাতুতে গড়া। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসার অদম্য জেদ ছিল তার। কোমা থেকে জেগে ওঠার পর, তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হতে শুরু করেন।

ডাক্তারদের পরামর্শ ও নিজের কঠোর পরিশ্রমে তিনি সেরে উঠেন। এরপরে, বেলার জীবনে আসে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। ২০২৩ সালে তার কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়।

হাসপাতাল থেকে ফিরে আসার পর, বেলা তার পড়াশোনা চালিয়ে যান। তিনি জানতেন, শারীরিক দুর্বলতা সত্ত্বেও, তার স্বপ্ন পূরণ করতে হলে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।

অবশেষে, বহু প্রতীক্ষার পর, গত জুন মাসে গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে তিনি হেঁটে মঞ্চে ওঠেন। মা ও স্কুলের কর্মীদের সহায়তায়, তিনি তার চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছান।

সেই দৃশ্য ছিল উপস্থিত সকলের জন্য এক বিরল দৃষ্টান্ত।

বেলার এই সাফল্যে তার মা ডিয়ান হার্লের চোখে জল এসে যায়। তিনি বলেন, “আমার মেয়ে প্রমাণ করেছে, মানুষ চাইলে সবকিছু করতে পারে।”

বেলা এখন মেডিকেল স্কুলে ভর্তি হয়ে শিশুচিকিৎসক হতে চান। বেলার এই গল্প আমাদের সকলের জন্য অনুপ্রেরণা।

প্রতিকূলতাকে জয় করে কিভাবে সাফল্যের শিখরে পৌঁছানো যায়, বেলা যেন তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

তথ্যসূত্র: পিপল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *