এআই বন্ধু: কিশোরদের মন জয় করা এই প্রযুক্তির ফাঁদ?

বর্তমান ডিজিটাল যুগে, প্রযুক্তির অগ্রগতি শিশুদের জীবনযাত্রায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা তাদের কাছে এনে দিয়েছে ভার্চুয়াল জগৎ, যেখানে তারা বন্ধু তৈরি করতে পারে, জ্ঞান অর্জন করতে পারে এবং বিনোদন উপভোগ করতে পারে।

কিন্তু এই ডিজিটাল দুনিয়ার ভালো দিকের পাশাপাশি কিছু খারাপ দিকও রয়েছে। সম্প্রতি, কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন সঙ্গীর ব্যবহার বাড়ছে, যা অভিভাবকদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়, আমেরিকার ৭০ শতাংশের বেশি কিশোর-কিশোরী বর্তমানে এআই-নির্ভর ভার্চুয়াল সঙ্গীর সঙ্গে পরিচিত। তাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি নিয়মিতভাবে এই ধরনের এআই-এর সঙ্গে কথা বলে।

এই এআই সঙ্গীরা ব্যবহারকারীদের জন্য সবসময় উপলব্ধ থাকে এবং তাদের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকে। তারা ধৈর্যশীল এবং কোনো বিষয়ে তারা ব্যবহারকারীদের বিচার করে না। এই বৈশিষ্ট্যগুলো কিশোর-কিশোরীদের কাছে তাদের আকর্ষণীয় করে তোলে।

তবে অভিভাবকদের মনে রাখতে হবে, এই এআইগুলো তৈরি করা হয়েছে ব্যবহারকারীদের আকৃষ্ট করার জন্য। তারা সবসময় ব্যবহারকারীর কথা শোনে এবং তাদের সমর্থন করে।

বাস্তব জীবনে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি সব সময় হয় না। অভিভাবকদের উচিত সন্তানদের বোঝানো যে, এআই-এর সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং বাস্তব জীবনের বন্ধুদের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। বাস্তব জীবনে বন্ধুদের নিজস্ব মতামত থাকতে পারে, যা কঠিন পরিস্থিতিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে, যা এআই-এর ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না।

এক্ষেত্রে অভিভাবকদের সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি।

অভিভাবকদের জন্য কিছু পরামর্শ নিচে উল্লেখ করা হলো:

  • সন্তানদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করুন: তাদের এআই-এর ব্যবহার সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন। তাদের কৌতূহলকে উৎসাহিত করুন এবং তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিন। তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হোন এবং তাদের উদ্বেগকে বোঝার চেষ্টা করুন। তাদের এআই ব্যবহারের কারণগুলো জানার চেষ্টা করুন এবং তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হোন।
  • বাস্তবতার সঙ্গে পরিচয় করান: তাদের বোঝান যে এআই সঙ্গীরা তাদের মন জয় করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। বাস্তব জীবনে মানুষের সম্পর্কের ভিন্নতা থাকে, যা এআই-এর ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না। তাদের বোঝান যে, এআই-এর চেয়ে বাস্তব জীবনের বন্ধুদের গুরুত্ব অনেক বেশি।
  • নিয়ম তৈরি করুন: স্ক্রিন টাইম এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মতো, এআই ব্যবহারের ক্ষেত্রেও নিয়ম তৈরি করুন। তাদের কখন এবং কীভাবে এআই ব্যবহার করতে হবে, সে বিষয়ে আলোচনা করুন। মনে রাখতে হবে, অনেক এআই প্রোগ্রাম প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য তৈরি করা হয়েছে, যা বিভিন্ন প্রকারের আলোচনা করতে পারে।
  • অতিরিক্ত ব্যবহারের লক্ষণগুলো খেয়াল করুন: যদি আপনার সন্তান বাস্তব জীবনের চেয়ে এআই-এর সঙ্গে বেশি সময় কাটায়, তবে সতর্ক হন। যদি তারা তাদের ভার্চুয়াল সঙ্গীর থেকে দূরে থাকতে কষ্ট পায় বা তাদের থেকে আলাদা হলে মন খারাপ করে, তবে বুঝতে হবে, এটি স্বাভাবিক নয়।
  • মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সহায়তা: যদি আপনার সন্তান কোনো মানসিক সমস্যা, যেমন – বিষণ্ণতা, উদ্বেগ, একাকীত্ব অথবা খাদ্যাভ্যাসজনিত সমস্যায় ভোগে, তবে তাদের জন্য একজন মানুষের সমর্থন প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বন্ধু, পরিবার অথবা পেশাদার মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।
  • নিজেকে প্রস্তুত করুন: এআই সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন। প্রযুক্তির এই দ্রুত পরিবর্তন সম্পর্কে অবগত থাকুন। এতে আপনি আপনার সন্তানের উদ্বেগকে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবেন এবং তাদের সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারবেন।

এ বিষয়ে ১৮ বছর বয়সী গনেশ নায়ারের মতে, এআই ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকাটা এখন প্রায় অসম্ভব। তিনি বলেন, “এআই ব্যবহার না করার চেষ্টা করাটা অনেকটা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার না করার মতো।

এটি আমাদের জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে গেছে।” তিনি আরও যোগ করেন, “যে কোনো কঠিন কাজকে এআই সহজ করে তোলে। তবে এটি একটি সমস্যাও বটে। সবসময় সহজ পথে না গিয়ে, বরং কঠিন কাজগুলো করার চেষ্টা করুন।

যদি আপনি সহজে সবকিছু পাওয়ার ধারণা গ্রহণ করেন, তাহলে এই নতুন কৃত্রিম জগতে হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।”

সুতরাং, অভিভাবকদের সচেতনতা এবং সন্তানদের প্রতি সঠিক দিকনির্দেশনা বর্তমান ডিজিটাল যুগে খুবই জরুরি। সন্তানদের সুস্থ মানসিক বিকাশে সাহায্য করার জন্য অভিভাবকদের সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *