মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন সংক্রান্ত নীতি প্রায়ই বিতর্কের জন্ম দেয়, এবং সম্প্রতি টেনেসিতে এক যৌথ অভিযানে শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতারের ঘটনা সেই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। মার্কিন ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (ICE) এবং টেনিসি হাইওয়ে পেট্রোলের মিলিত প্রচেষ্টায় এই ধরপাকড় চালানো হয়। খবরটি সেখানকার অভিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
ঘটনার সূত্রপাত হয় গত ৩ মে তারিখে, যখন টেনিসি হাইওয়ে পেট্রোল এবং ICE যৌথভাবে রাস্তায় তল্লাশি শুরু করে। এই অভিযানে প্রায় ৬০০ টি গাড়িকে থামানো হয় এবং এর ফলস্বরূপ, কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী, ১০৩ জন অভিবাসন আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে আটক হন। এই ধরপাকড়ের তীব্র নিন্দা করে অনেকে একে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যাপকহারে অভিবাসন বিতাড়নের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেখছেন।
টেনেসির গভর্নর বিল লি, যিনি রিপাবলিকান দলের সদস্য, অভিবাসন বিষয়ক নীতির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি সম্প্রতি রাজ্যের নিরাপত্তা বিভাগের অধীনে একটি অভিবাসন বিষয়ক নতুন বিভাগ তৈরি করেছেন, যা এই ধরনের কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করতে সহায়তা করবে। এর বিপরীতে, ন্যাশভিলের মতো শহরগুলি, যেখানে ডেমোক্রেটদের প্রভাব বেশি, এই ধরপাকড়ের সঙ্গে কোনোভাবে জড়িত থাকতে অস্বীকার করেছে এবং এর সমালোচনা করেছে। ন্যাশভিলের আইন পরিচালক, ওয়ালি ডিটজ, জানিয়েছেন যে শহর কর্তৃপক্ষ এই অভিযান সম্পর্কে আগে থেকে অবগত ছিল না।
এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে, টেনিসি ইমিগ্র্যান্ট অ্যান্ড রিফিউজি রাইটস কোয়ালিশনের নির্বাহী পরিচালক, লিসা শেরম্যান লুনা, বলেছেন, এই ধরনের অভিযান অভিবাসী ও শরণার্থীদের মধ্যে ভীতি তৈরি করে এবং অনেক ক্ষেত্রে এটি একটি ‘জাতিগত প্রোফাইলিং’-এর নামান্তর। তাঁর মতে, সামান্য ত্রুটি, যেমন – গাড়ির লাইট ভাঙা বা কাঁচের রং পরিবর্তন, ইত্যাদি কারণেও অনেককে আটক করা হয়েছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, আটককৃতদের অনেকেই হয়তো ভালো আইনি সহায়তা পেলে দেশে থাকার অনুমতি পেতে পারতেন।
নজরদারির বিষয়ে হাইওয়ে পেট্রোল জানিয়েছে যে, তারা কেবল গাড়ির চালকদের আচরণের ভিত্তিতে তল্লাশি চালায় এবং এর সঙ্গে জাতি বা এলাকার কোনো সম্পর্ক নেই। তবে, অভিবাসী অধিকার কর্মীরা বলছেন, এই ধরনের অভিযান শহরের সেই এলাকাগুলিতে বেশি কেন্দ্রীভূত হয়েছে যেখানে মূলত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিবাসন নীতি এবং ধরপাকড়ের ঘটনা বাংলাদেশের মানুষের জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, প্রতি বছর বহু বাংলাদেশি কাজের সন্ধানে বা উন্নত জীবনের আশায় বিদেশে পাড়ি জমান। এই ধরনের ঘটনার ফলে বিদেশে বসবাস করা অভিবাসীদের মধ্যে সবসময় একটা ভীতি কাজ করে এবং তাঁরা আইনি জটিলতায় পড়ার ঝুঁকিতে থাকেন। ন্যাশভিলের ঘটনার পুনরাবৃত্তি অন্য কোথাও ঘটলে, তা সেখানকার অভিবাসী জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রায় আরও কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন