যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসিতে একটি বিস্ফোরক কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
স্থানীয় সময় শুক্রবার সকালে অ্যাকুরেট এনার্জেটিক সিস্টেমস নামের ওই কারখানায় এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। নিহতদের পরিবার পরিজনদের কাছে খবর পৌঁছে দেওয়া হয়েছে, শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো অঞ্চলে।
কর্তৃপক্ষ ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছে।
বিস্ফোরণের পর ধ্বংসস্তুপ সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে। প্রায় আধা বর্গমাইলের বিশাল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ধ্বংসাবশেষ।
হামফ্রিস কাউন্টি শেরিফ অফিসের প্রধান ক্রিস ডেভিস জানিয়েছেন, “আমরা অত্যন্ত ধীর গতিতে কাজ করছি, কারণ আমাদের এক একটি পদক্ষেপ খুব গুরুত্বপূর্ণ।”
বিস্ফোরণের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে কারখানার একটি ভবন সম্পূর্ণভাবে ধূলিসাৎ হয়ে গেছে।
ধ্বংসস্তুপের নিচে আর কোনো জীবিত ব্যক্তিকে পাওয়া যায়নি।
শোক প্রকাশ করে শেরিফ ডেভিস বলেন, “আমরা এখন উদ্ধার কার্যক্রম থেকে পুনরুদ্ধারের দিকে যাচ্ছি।”
বিস্ফোরণের কারণ এখনো পর্যন্ত অজানা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালকোহল, তামাক, আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক ব্যুরোর (এ টি এফ) একজন সহকারী বিশেষ প্রতিনিধি টাইরা কানিংহাম জানিয়েছেন, “এই দুঃখজনক ঘটনার কারণ খুঁজে বের করতে আমরা বিজ্ঞানভিত্তিক ও পদ্ধতিগত তদন্ত করছি।
স্থানীয় জনগণের কাছে সত্য তুলে ধরা হবে।”
তদন্তকারীরা প্রাথমিকভাবে বিস্ফোরণের সূত্রপাতের স্থান চিহ্নিত করার চেষ্টা করছেন।
এ টি এফের বিস্ফোরক প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের বিশেষ প্রতিনিধি ব্রাইস ম্যাকক্র্যাকেন বলেন, “আমরা ভেতরের অংশে প্রবেশ করে সেখানে অবশিষ্ট সবকিছু খতিয়ে দেখব।
এরপর আমরা প্রতিটি আলামত সংগ্রহ করব।”
তদন্তের অংশ হিসেবে কর্মীদের রেকর্ড পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে বলেও জানা গেছে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যদি কোনো অপরাধমূলক কার্যকলাপের প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে দোষীদের জবাবদিহি করা হবে।
আর যদি এটি দুর্ঘটনা হয়, তবে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, এই ঘটনায় শোকাহত স্থানীয় বাসিন্দারা।
নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন তারা।
শেরিফ ডেভিস বলেন, “আমরা আমাদের সম্প্রদায়ের সকলকে একত্রিত হয়ে নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে আহ্বান জানাচ্ছি।
এই ক্ষতি শুধু কয়েকটি পরিবারের নয়, এটি আমাদের সবার।”
কারখানায় কাজ করতেন এমন একজন বৃদ্ধ কর্মচারী স্যামি ক্রিক জানান, তিনি প্রথমে ভেবেছিলেন ভূমিকম্প হয়েছে।
বিস্ফোরণের শব্দে তার ঘর কেঁপে উঠেছিল।
তিনি জানান, নিহতদের মধ্যে তার অনেক বন্ধু ও সহকর্মী ছিলেন।
এদের মধ্যে কয়েকজন ছিলেন তার খুব কাছের মানুষ।
তিনি বলেন, “আমি তাদের মুখগুলো দেখতে পাচ্ছি, তাদের কণ্ঠস্বর শুনতে পাচ্ছি।”
আহত ও নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ক্রিক।
তিনি জানান, একসময় তিনি প্রায় প্রতিদিনই ওই ভবনে দুপুরের খাবার খেতেন, যেখানে বিস্ফোরণটি ঘটেছে।
এই কারখানায় আগে নিরাপত্তা সংক্রান্ত কিছু সমস্যা ছিল।
ফেডারেল রেকর্ড অনুযায়ী, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা বিধিনিষেধ লঙ্ঘনের কারণে কয়েক বছর আগে কোম্পানিটিকে জরিমানা করা হয়েছিল।
সেই সময় কর্মীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম, দূষণকারীদের সংস্পর্শ এবং অপর্যাপ্ত নিরাপত্তা প্রশিক্ষণের মতো বিষয়গুলো নিয়ে অভিযোগ ছিল।
যদিও কোম্পানিটি সেই অভিযোগের বিরুদ্ধে আপিল করেছিল এবং পরে একটি সমঝোতায় আসে।
এছাড়াও, ২০২১ সালে স্যামি ক্রিক নামের এক ব্যক্তি কোম্পানির বিরুদ্ধে বয়স-সংক্রান্ত বৈষম্যের অভিযোগ এনে মামলা করেছিলেন।
ক্রিক জানিয়েছিলেন, ডায়াবেটিসের কারণে তিনি দিনের বেলা স্ন্যাকস খেতেন, যা কোম্পানির পছন্দ ছিল না।
তার সুপারভাইজাররা তাকে “অতিরিক্ত বয়স্ক ও ধীরগতির” আখ্যা দিয়ে চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিল।
ক্রিক বলেন, “আমার খুব খারাপ লেগেছিল, তারা আমাকে এভাবে ব্যবহার করছিল।”
শুক্রবারকের এই ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো এলাকায়।
নিহতদের স্মরণে বিভিন্ন স্থানে শোকসভা ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা জেনি ব্রাউন জানান, তিনি নিহতদের কয়েকজনকে চিনতেন এবং তাদের পরিবারের সঙ্গে কাজ করতেন।
তিনি বলেন, “আমাদের সম্প্রদায়ের জন্য এটি একটি দুঃখের দিন।
আমাদের শোক কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে।”
বর্তমানে সবার প্রধান মনোযোগ নিহতদের পরিবারের প্রতি।
জেনি ব্রাউন বলেন, “এই ঘটনার কারণ খোঁজার চেয়ে এখন জরুরি হলো ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানো।
তারা তাদের পরিবার এবং সম্প্রদায়ের ভালোবাসার মানুষ ছিল।”
আঞ্চলিক কর্মকর্তাদের মতে, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহায়তা করার জন্য কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন