টেকনিক্যাল ত্রুটির কারণে টেনেসির বিস্ফোরক কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ, ১৮ জন নিখোঁজ।
যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসিতে একটি সামরিক ও শিল্প-কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার (স্থানীয় সময়) সকালে হামফ্রিস কাউন্টিতে অবস্থিত ‘অ্যাকুরেট এনার্জেটিক সিস্টেমস’ (এএসই) নামের বিস্ফোরক তৈরির কারখানায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। এতে একটি ভবন সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে এবং এখন পর্যন্ত ১৮ জন কর্মী নিখোঁজ রয়েছেন।
বিস্ফোরণের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে, এটি কয়েক মাইল দূর থেকেও অনুভূত হয়েছে। ধ্বংসস্তূপ অন্তত আধা বর্গমাইল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় কর্মকর্তারা হতাহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, তবে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক সংখ্যা এখনো জানাতে পারেননি। উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে জীবিতদের খোঁজ করছেন।
হামফ্রিস কাউন্টির শেরিফ, ক্রিস ডেভিস, এই ঘটনাকে তার কর্মজীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ দৃশ্য হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা অনেক মানুষকে হারিয়েছি। এটি শুধু ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে একাকীত্বে ফেলবে না, বরং এর প্রভাব অনেক গভীরে যাবে। আপনারা যাদের সঙ্গে বেড়ে উঠেছেন, তাদেরও হয়তো এর শিকার হতে হয়েছে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিস্ফোরণের সময় কারখানায় বেশ কয়েকজন শ্রমিক কাজ করছিলেন। এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করে এএসই-র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়েন্ডাল স্টিনসন বলেন, “আমরা শোকাহত পরিবার ও নিহতদের স্বজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। তাদের জন্য প্রার্থনা করছি।”
বিস্ফোরণের কারণ এখনো জানা যায়নি এবং বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, বিস্ফোরণের পর কারখানায় আরও কয়েকটি ছোট বিস্ফোরণ হয়। স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে এই ঘটনার সূত্রপাত হয়, যা আশপাশের বাসিন্দাদের ঘুম ভাঙিয়ে দেয়।
বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, প্রায় ১৫ মাইল দূরের বাসিন্দারাও এটি অনুভব করেছেন। এমনকি ২০ মাইলের বেশি দূরের বাসিন্দারা শব্দ শুনে প্রথমে ভেবেছিলেন, তাদের বাড়িতে হয়তো ভূমিকম্প হয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন ধ্বংসাবশেষের আশেপাশে থাকা লোকজনকে দ্রুত এলাকা ত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছে। জরুরি বিভাগের কর্মীরা বর্তমানে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ফেডারেল ব্যুরো অফ অ্যালকোহল, টোব্যাকো, ফায়ার আর্মস অ্যান্ড এক্সপ্লোসিভস (এটিএফ) এবং অন্যান্য সংস্থার সদস্যরা যৌথভাবে তদন্তে কাজ করছেন।
অ্যাকুরেট এনার্জেটিক সিস্টেমস (এএসই) মূলত মার্কিন সামরিক বাহিনী এবং শিল্পখাতের জন্য বিভিন্ন উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বিস্ফোরক দ্রব্য তৈরি করে। এই কারখানায় প্রায় ৮০ জন কর্মী কাজ করেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, টেনেসির এই কারখানাটি প্রায় ১,৩০০ একর জমির উপর অবস্থিত।
এই দুর্ঘটনার পর স্থানীয় কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহত ও নিখোঁজদের আত্মার শান্তি কামনায় স্থানীয় একটি পার্কে মোমবাতি প্রজ্বালন করে প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, অতীতেও এই কারখানায় মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটেছে। ২০১৪ সালে কারখানার একটি বিস্ফোরণে একজন নিহত ও চারজন আহত হয়েছিলেন। এছাড়া, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা বিধিনিষেধ ভঙ্গের কারণে কোম্পানিটিকে জরিমানা করা হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রায়ই ছোট শহরগুলোতে শিল্প কারখানায় দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়। এই ঘটনাগুলো সেখানকার শ্রমিকদের জীবনযাত্রায় গভীর প্রভাব ফেলে।
বাংলাদেশেও শিল্প-কারখানায় নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মাঝে মাঝেই বিভিন্ন দুর্ঘটনায় শ্রমিকদের হতাহতের ঘটনা ঘটে। উন্নত দেশগুলোর মতো, আমাদের দেশেও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
তথ্য সূত্র: সিএনএন