বিধ্বংসী এক বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসির একটি বিস্ফোরক তৈরির কারখানা। শুক্রবারের এই দুর্ঘটনায় কারখানার ভেতরে থাকা ১৬ জন কর্মীর সবাই নিহত হয়েছেন।
ভয়াবহ এই বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধানে নেমেছেন তদন্তকারীরা। তবে ঘটনার ভয়াবহতা এবং ধ্বংসযজ্ঞের কারণে তাঁদের কাজটা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
টেনেসির রাজধানী ন্যাশভিলের প্রায় ৬০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত ‘অ্যাকুরেট এনার্জেটিক সিস্টেমস’ নামের এই কারখানায় সামরিক ও শিল্পখাতে ব্যবহারের জন্য উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরক দ্রব্য তৈরি করা হতো। জানা গেছে নিহতদের মধ্যে ছিলেন কারখানার কর্মীরা।
ঘটনার দিন, সম্ভবত কারখানায় মজুত থাকা বিস্ফোরক থেকেই এই বিস্ফোরণ ঘটে।
বিস্ফোরণের অভিঘাত এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, কারখানার ভবনটি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, বিস্ফোরণের কারণে আশেপাশে বিশাল এলাকা জুড়ে ধ্বংসস্তূপ তৈরি হয়েছে এবং সম্ভাব্য প্রমাণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বহু দূরে।
এই পরিস্থিতিতে, ঘটনার কারণ খুঁজে বের করা এবং হতাহতদের পরিচয় শনাক্ত করা – উভয় কাজই বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ‘দ্য ব্যুরো অফ অ্যালকোহল, টোব্যাকো, ফায়ারআর্মস অ্যান্ড এক্সপ্লোসিভস’ (এ টি এফ)-এর নেতৃত্বে একটি বিশেষ দল এই ঘটনার তদন্ত করছে। তাঁরা জানিয়েছেন, পুরো এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরেই মূল তদন্ত শুরু করা হবে।
এছাড়া, ধ্বংসস্তূপের ভেতর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিস্ফোরকগুলো নিষ্ক্রিয় করার কাজটিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তদন্তকারীদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, বিস্ফোরণের উৎস খুঁজে বের করা। প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিস্ফোরণের ফলে ছোট ছোট আরও কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটেছে, যার ফলে প্রায় আধা বর্গকিলোমিটার এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এছাড়া, বিস্ফোরণের প্রমাণস্বরূপ ছোট ছোট অংশ, যেমন – নখ বা তার চেয়েও ছোট কিছু, কয়েক কিলোমিটার দূরে গিয়ে পড়েছে। ফলে, ঘটনার মূল কারণ খুঁজে বের করতে বেশ বেগ পেতে হবে তদন্তকারীদের।
এ টি এফ-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই ঘটনার সঙ্গে যদি কোনো অপরাধমূলক কার্যকলাপের যোগসূত্র পাওয়া যায়, তাহলে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে। আর যদি এটি নিছক একটি দুর্ঘটনা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের দুর্ঘটনার তদন্ত বেশ সময়সাপেক্ষ। কারণ, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সব প্রমাণ সংগ্রহ করতে হয় অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে।
ধ্বংসস্তূপের প্রতিটি অংশ খুঁটিয়ে দেখে, সেগুলোর উৎস খুঁজে বের করতে হয়। এরপর, ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে পাওয়া বিভিন্ন আলামতগুলো একত্রিত করে, বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা করা হয়।
ইতিমধ্যে, নিহত কর্মীদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে, যাতে তাঁদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁদের স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার চেষ্টা চলছে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন