মৃত্যুদণ্ডের সময় যন্ত্রনায় কাতর, ডিফাইব্রুলেটর নিষ্ক্রিয় না করায় ভয়ঙ্কর পরিণতি!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা নিয়ে বিতর্ক, কারাবন্দীর দেহে থাকা যন্ত্রাংশ নিয়ে উদ্বেগ।

সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি অঙ্গরাজ্যে বাইরন ব্ল্যাক নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। ১৯৮৮ সালে সংঘটিত একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দায়ে তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন।

তবে এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার প্রক্রিয়াটি বর্তমানে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। কারণ, মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সময় ব্ল্যাকের শরীরে একটি বিশেষ চিকিৎসা-যন্ত্র (ডিফিব্রিলেটর) সক্রিয় ছিল, যা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে।

জানা যায়, ব্ল্যাকের শরীরে একটি ইমপ্ল্যান্টেবল কার্ডিওভার্টার-ডিফিব্রিলেটর (ICD) বসানো ছিল। এটি হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য একটি জরুরি চিকিৎসা-যন্ত্র, যা হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক রাখতে এবং প্রয়োজনে শক দিতে পারে।

মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার সময় এই যন্ত্রটি বন্ধ করা হয়নি, যা নিয়ে ব্ল্যাকের আইনজীবীরা তীব্র আপত্তি জানান। তাদের আশঙ্কা ছিল, প্রাণঘাতী ইনজেকশন দেওয়ার সময় এই যন্ত্রের কারণে ব্ল্যাক অতিরিক্ত যন্ত্রণা পেতে পারেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মৃত্যুদণ্ড শুরুর কিছুক্ষণ পরেই ব্ল্যাক তীব্র যন্ত্রণার কথা বলেছিলেন। তিনি একাধিকবার মাথা তোলার চেষ্টা করেন এবং ভারী শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে দেখা যায়।

মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সময় উপস্থিত থাকা সাতজন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিও ব্ল্যাকের অস্বস্তি লক্ষ্য করেন। ব্ল্যাকের আইনজীবী কেলি হেনরি এই ঘটনাকে অত্যন্ত দুঃখজনক এবং আইন বিরুদ্ধ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

আদালতে এই ডিফিব্রিলেটর বন্ধ করা হবে কিনা, তা নিয়ে বেশ কয়েক দিন ধরে আইনি লড়াই চলেছিল। ব্ল্যাকের আইনজীবীরা ডিভাইসটি বন্ধ করার জন্য আদালতের কাছে আবেদন জানালেও, টেনেসি সুপ্রিম কোর্ট সেই আবেদন খারিজ করে দেয়।

আদালতের যুক্তি ছিল, মৃত্যুদণ্ডের সময় এই যন্ত্রের কারণে ব্ল্যাকের শরীরে কোনো প্রভাব পড়বে না।

এদিকে, ব্ল্যাকের আইনজীবী জানিয়েছেন, তারা ময়নাতদন্তের ফল, ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম (ইকেজি) ডেটা এবং ডিফিব্রিলেটরের তথ্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করবেন। তাঁদের প্রধান উদ্বেগের কারণ ছিল, ব্ল্যাকের যন্ত্রণা প্রকাশের বিষয়টি।

কারণ, মৃত্যুদণ্ডের জন্য ব্যবহৃত ওষুধ প্রয়োগের পর দ্রুত তাঁর সংজ্ঞা হারানোর কথা ছিল।

ব্ল্যাকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, ১৯৮৮ সালে তিনি তাঁর বান্ধবী অ্যাঞ্জেলা ক্লে এবং তাঁর দুই মেয়ে লাতোয়া ও লাকেশা ক্লেকে গুলি করে হত্যা করেন। ঘটনার সময় ব্ল্যাক একটি কারখানায় কাজ করতেন এবং প্যারোলে মুক্তি পেয়েছিলেন।

নিহত অ্যাঞ্জেলার বোন লিনেট বেল বলেছেন, “ব্ল্যাক এখন ঈশ্বরের বিচারের মুখোমুখি হবেন। আমরাও সেই একই কষ্টের মধ্য দিয়ে গিয়েছি, যা তিনি তাঁর পরিবারের জন্য রেখে গেলেন।”

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুদণ্ড নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। মানবাধিকার সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরে মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করে আসছে।

তাদের মতে, মৃত্যুদণ্ড একটি নিষ্ঠুর ও অমানবিক শাস্তি। এছাড়া, মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে অনেক সময় গুরুতর ত্রুটি দেখা যায়, যা বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রমাণ করে।

২০২৩ সাল পর্যন্ত, যুক্তরাষ্ট্রে ২৮ জন আসামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এই সংখ্যাটি ২০১৮ সালের পর সর্বোচ্চ।

বাইরন ব্ল্যাকের ঘটনাটি আবারও মৃত্যুদণ্ডের নৈতিকতা এবং কারাবন্দীদের অধিকারের বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *