টেনিস খেলোয়াড়দের অধিকার আদায়ের লড়াই: প্রধান সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে নোভাক জোকোভিচদের মামলা।
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় টেনিস খেলোয়াড়দের অধিকার রক্ষায় গঠিত ‘প্রফেশনাল টেনিস প্লেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন’ (পিটিপিএ)। এই সংগঠনটি এবার পেশাদার টেনিসের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছে।
খেলোয়াড়দের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো এবং তাদের অধিকার সুরক্ষাই এই মামলার মূল উদ্দেশ্য।
মামলার প্রধান বিবাদীরা হলো ‘অ্যাসোসিয়েশন অব টেনিস প্রফেশনালস’ (এটিপি), ‘উইমেন’স টেনিস অ্যাসোসিয়েশন’ (ডব্লিউটিএ), ‘ইন্টারন্যাশনাল টেনিস ফেডারেশন’ (আইটিএফ) এবং ‘ইন্টারন্যাশনাল টেনিস ইন্টিগ্রিটি এজেন্সি’ (আইটিআইএ)। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালতে ১৬৩ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে।
এই মামলায় খেলোয়াড়দের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন নোভাক জোকোভিচ, ভ্যাসেক পসপিসিল, নিক কিরগিওস এবং সোরানা সিরস্টির মতো তারকারা।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, টেনিসের এই নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরে খেলোয়াড়দের অধিকার খর্ব করছে। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে প্রতিযোগিতাকে দমিয়ে রেখেছে, পুরস্কারের অর্থের পরিমাণে কারসাজি করেছে এবং খেলোয়াড়দের ওপর র্যাংকিং-সংক্রান্ত বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।
এর ফলে খেলোয়াড়রা অন্য কোনো উপায়ে অর্থ উপার্জনে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন। শুধু তাই নয়, আইটিআইএ খেলোয়াড়দের অ্যান্টি-ডোপিং এবং দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমের নামে ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
পিটিপিএ-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হলেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি।
তাই তারা আইনি পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছেন। পিটিপিএ’র নির্বাহী পরিচালক আহমাদ নাসসার এক বিবৃতিতে বলেন, “সংস্থাগুলোর জৌলুসপূর্ণ চেহারার আড়ালে খেলোয়াড়দের সঙ্গে যে অন্যায় আচরণ করা হচ্ছে, তা মেনে নেওয়া যায় না।
খেলোয়াড়দের প্রতিভা ও শ্রমকে শোষণ করা হচ্ছে, যা তাদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।”
খেলোয়াড়দের র্যাংকিংয়ের বিষয়টিও মামলার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নিয়ম অনুযায়ী, এটিপি ও ডব্লিউটিএ অনুমোদিত ইভেন্টগুলোতে অংশ নিয়ে খেলোয়াড়রা র্যাংকিং পয়েন্ট অর্জন করেন।
পিটিপিএ’র মতে, এর ফলে খেলোয়াড়দের বছরে প্রায় ৪৫ সপ্তাহ ধরে খেলতে হয়, যা তাদের জন্য অত্যন্ত কঠিন এবং স্বাস্থ্যকর নয়।
এছাড়াও, খেলোয়াড়দের অন্য কোনো টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণে বাধা দেওয়া হয় এবং জরিমানা করা হয়।
আর্থিক বিষয় ছাড়াও, খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। পিটিপিএ জানায়, সংস্থাগুলো খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দেয় না।
তীব্র গরম ও রাতের বেলা খেলা চালিয়ে যেতে তাদের বাধ্য করা হয়। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ও ইউএস ওপেনে এমন ঘটনা ঘটেছে।
টেনিসের দুর্নীতি ও মাদকবিরোধী কার্যক্রম দেখাশোনা করার দায়িত্বে থাকা আইটিআইএ-এর বিরুদ্ধেও খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত তথ্যের ওপর নজরদারির অভিযোগ আনা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত ডিভাইস তল্লাশি, ঘন ঘন মাদক পরীক্ষা এবং আইনজীবীর সহায়তা ছাড়া দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের মতো বিষয়গুলো খেলোয়াড়দের নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
এই মামলার অন্যতম বাদী, উইম্বলডন ডাবলস চ্যাম্পিয়ন ভ্যাসেক পসপিসিল বলেন, “বিষয়টি শুধু অর্থের নয়, বরং এটি মৌলিক অধিকার ও সম্মানের সঙ্গে জড়িত।
খেলোয়াড় হিসেবে আমি অনেক ভাগ্যবান, কিন্তু ক্যারিয়ারের শুরুতে খেলার জন্য আমাকে গাড়িতে ঘুমাতে হয়েছে। অন্য কোনো খেলায় এমনটা হয় না।”
পিটিপিএ ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, যা এটিপি ও ডব্লিউটিএ থেকে স্বাধীনভাবে খেলোয়াড়দের প্রতিনিধিত্ব করে।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, এটিপি পিটিপিএকে দুর্বল করতে বিভিন্ন নিয়ম তৈরি করেছে। এমনকি পিটিপিএ’র সঙ্গে যুক্ত খেলোয়াড়দের পেনশন এবং প্লেয়ার কাউন্সিলে অংশগ্রহণেও বাধা দেওয়া হচ্ছে।
নোভাক জোকোভিচ খেলোয়াড়দের জন্য একটি ন্যায্য পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন। তার মতে, খেলোয়াড়দের খেলাটির বিলিয়ন ডলারের রাজস্বের একটি বড় অংশ পাওয়া উচিত।
এই মামলার ফলে টেনিস জগতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
যদি খেলোয়াড়দের জয় হয়, তাহলে রাজস্ব ভাগাভাগি এবং র্যাংকিং পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসতে পারে। খেলোয়াড়রা আরও বেশি স্বাধীনতা পেতে পারেন, যা অন্যান্য খেলার মতো টেনিসেও দেখা যেতে পারে।
যদিও টেনিসের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি, তবে তারা জানিয়েছে যে বিদ্যমান কাঠামো প্রতিযোগিতামূলক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয়।
এখন দেখার বিষয়, এই আইনি লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত কী হয়, যা সম্ভবত পেশাদার টেনিসের ভবিষ্যৎকে নতুনভাবে গড়ে তুলবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান