চীনে টেসলার ধাক্কা: আমদানি বন্ধ, সংকটে মাস্ক!

চীনের বাজারে তাদের দুটি মডেলের গাড়ি, মডেল এস এবং মডেল এক্স-এর বুকিং নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে টেসলা। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে শুল্ক বৃদ্ধি পাওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। খবরটি জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীন-এ গাড়ি দুটি আমদানি করা হতো। ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির জেরে শুল্ক বেড়ে যাওয়ায় এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে টেসলা। টেসলার ওয়েবসাইটে এখন এই দুটি মডেলের ‘অর্ডার করুন’ বাটনটি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং সেখানে ‘বর্তমান গাড়িগুলো দেখুন’ লেখা দেখা যাচ্ছে।

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ তীব্র আকার ধারণ করেছে। পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপের অংশ হিসেবে উভয় দেশই একে অপরের পণ্যের ওপর শুল্কের বোঝা বাড়িয়েছে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি চীনে পাঠানো এখন অনেক বেশি ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র চীন-এর ওপর ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে, জবাবে চীনও মার্কিন পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বৃদ্ধি করেছে।

টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্ক এক সময় ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। যদিও মাস্ক সম্প্রতি শুল্কের বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছেন। তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ‘শূন্য শুল্ক’ থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেছিলেন।

বর্তমানে টেসলা চীনের সাংহাই শহরে তাদের মডেল ৩ এবং মডেল ওয়াই তৈরি করে। এর ফলে তারা শুল্কের কিছু চাপ কমাতে সক্ষম হয়েছে। তবে, সরবরাহ শৃঙ্খলে এর প্রভাব এখনো রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, টেসলার যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী প্রায় ৪০ শতাংশ কোম্পানি চীনের। যদিও বাণিজ্য উত্তেজনা বাড়ার কারণে টেসলা অন্যান্য দেশ থেকেও যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করার চেষ্টা করছে।

এদিকে, বাজারে টেসলার গাড়ির চাহিদা কমে যাওয়ায় কোম্পানিটি আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের সঙ্গে মাস্কের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক টেসলার ব্র্যান্ডের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, যা বিক্রয় হ্রাসের অন্যতম কারণ। তাছাড়াও, বাজারে নতুন মডেলের গাড়ির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে সমস্যা হচ্ছে টেসলার, বিশেষ করে চীনের বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে।

শেয়ারবাজার বিশ্লেষক ড্যান আইভেসের মতে, টেসলা বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থা হওয়া সত্ত্বেও, তাদের শেয়ারের মূল্যায়ন এখনো কম। শুক্রবারের বাজার অনুযায়ী, টেসলার বাজারমূল্য ছিল প্রায় ৮১২ বিলিয়ন ডলার। তিনি আরও বলেছেন, টেসলা বর্তমানে একটি ‘পূর্ণাঙ্গ সংকট’-এর মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে এবং মাস্কের উচিত ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গ ত্যাগ করা।

এ বিষয়ে টেসলার মন্তব্য জানতে চাওয়া হলেও, তারা কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *