টেসলার ব্যবসায়ে ধস! এলন মাস্কের স্বপ্ন কি তবে ভাঙছে?

টেসলার মুনাফায় বড় পতন, বাড়ছে উদ্বেগে।

বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান টেসলার আয় কমে যাওয়ায় উদ্বেগ বাড়ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে তাদের সমন্বিত মুনাফা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।

একই সময়ে, গাড়ির বিক্রিও কমেছে, যা বাজারের জন্য একটি অশনি সংকেত।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় টেসলার সমন্বিত নেট আয় ২৩ শতাংশ কমে ১.৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এই সময়ে তাদের গাড়ির বিক্রিও ১৩.৫ শতাংশ কমেছে।

শুধু তাই নয়, তাদের মূল ব্যবসা, অর্থাৎ গাড়ির রাজস্ব আয়ও ১৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। বিশ্লেষকদের ধারণা, টেসলা সম্ভবত তাদের গাড়ির দাম কমাতে বাধ্য হয়েছে, যার ফলস্বরূপ তাদের মুনাফায় এই পতন।

গাড়ির ব্যবসা থেকে আসা রাজস্ব কমার পাশাপাশি, প্রতি গাড়ির গড় আয়ও কমেছে। প্রতিটি গাড়ি বিক্রি করে তারা প্রায় ৫০০ ডলার কম আয় করেছে।

ফলে, প্রতি গাড়ির গড় আয় দাঁড়িয়েছে ৪২,২৩১ ডলারে। সবচেয়ে বেশি বিক্রিত মডেল ওয়াই এবং মডেল থ্রি-এর বিক্রি কমেছে ১২ শতাংশ।

অন্যদিকে, সাইবারট্রাকসহ অন্যান্য বেশি দামি মডেলের বিক্রি ৫২ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, টেসলার এই দুর্বল পারফরম্যান্সের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান কারণ হলো, টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্কের কিছু রাজনৈতিক মন্তব্য, যা অনেক ক্রেতার মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

এছাড়াও, বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে চীনের গাড়ি প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে। টেসলার বাজার হারানোর পেছনে এটিও একটি বড় কারণ।

বর্তমানে, টেসলাকে বিশ্বের বৃহত্তম বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রস্তুতকারকের স্থান হারাতে হতে পারে। চীনের একটি কোম্পানি, বিওয়াইডি (BYD)-এর উত্থান টেসলার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

উল্লেখ্য, বিওয়াইডি বর্তমানে আমেরিকাতে তাদের গাড়ি বিক্রি করে না, তবুও তারা টেসলার জন্য একটি শক্তিশালী প্রতিপক্ষ।

টেসলার জন্য উদ্বেগের আরেকটি কারণ হলো, আগামী অক্টোবর মাস থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বৈদ্যুতিক গাড়ির ক্রেতাদের জন্য ৭,৫০০ ডলারের ট্যাক্স ক্রেডিট বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এর ফলে, কোম্পানিটিকে বিক্রি ধরে রাখতে গাড়ির দাম আরও কমাতে হতে পারে, যা তাদের মুনাফার ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করবে।

কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা টেসলার মোট বিক্রির প্রায় অর্ধেক।

অন্যদিকে, টেসলার রেগুলেটরি ক্রেডিট বিক্রির বাজারও সংকুচিত হচ্ছে। এই ক্রেডিট বিক্রি করে তারা ২০১৯ সাল থেকে প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে।

এই আয়ের ওপর নির্ভর করে তাদের লাভের হিসাব বজায় ছিল। তবে, নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এখন অন্যান্য গাড়ি প্রস্তুতকারকদের কাছ থেকে এই ধরনের ক্রেডিট পাওয়ার সম্ভাবনা কমে গেছে।

শেয়ারহোল্ডারদের সঙ্গে আলাপকালে ইলন মাস্ক সরাসরি কোম্পানির আয় এবং বিক্রির পতন নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে, তিনি স্বীকার করেছেন যে সামনের কয়েকটা প্রান্তিকে তাদের কঠিন সময় পার করতে হতে পারে।

একইসঙ্গে, তিনি ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে কোম্পানির অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উন্নতিরও আভাস দিয়েছেন।

ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে, মাস্ক তাদের রোবট্যাক্সি (Robotaxi) পরিষেবা এবং হিউম্যানয়েড রোবট অপটিমাস (Optimus)-এর ব্যাপক উৎপাদনের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি (Autonomy) ব্যবসার মূল্য অনেক বাড়িয়ে দেবে।

যদিও এই দুটি বিষয় এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, তবে মাস্কের এমন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করতে পারে।

বর্তমানে, গুগলের একটি স্বয়ংক্রিয় গাড়ি পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, ওয়েইমো (Waymo) এই বাজারে এগিয়ে আছে। ওয়েইমো এরই মধ্যে প্রতি সপ্তাহে ২৫০,০০০-এর বেশি পেইড রাইড সরবরাহ করছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *