আতঙ্কে মাস্ক! যুক্তরাষ্ট্রে টেসলা শোরুম ঘেরাও, ফুঁসছে জনতা!

এলোন মাস্কের মার্কিন সরকারে যুক্ত হওয়া নিয়ে বিতর্কের জেরে বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদের ঝড়, টেসলার ভবিষ্যৎ কী?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের ঘনিষ্ঠতা নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। মাস্ককে সরকারের ‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি’ (ডিওজিই) নামক একটি নতুন বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের বিভিন্ন শহরে টেসলার শোরুমের সামনে বিক্ষোভ হয়েছে।

বিক্ষোভকারীরা মাস্কের সরকারি পদে আসীন হওয়া এবং এর মাধ্যমে সংবেদনশীল সরকারি তথ্য হাতে পাওয়ার বিষয়টির তীব্র বিরোধিতা করছেন।

গত শনিবার, বিক্ষোভকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে টেসলার শোরুমগুলোর সামনে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানান। বিক্ষোভের কেন্দ্র ছিল টেসলার শোরুম ও সার্ভিস সেন্টারগুলো। বিক্ষোভকারীরা ‘এলোন মাস্ককে ঘৃণা করি’ এবং ‘বিলিয়নেয়ারতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করো’ -এরকম বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড বহন করেন।

ক্যালিফোর্নিয়া, নিউইয়র্ক, টেক্সাস, এবং অন্যান্য রাজ্যে শত শত মানুষ এই বিক্ষোভে অংশ নেন। বিক্ষোভের সময় কিছু স্থানে মাস্কের সমর্থক ও পাল্টা বিক্ষোভকারীদেরও দেখা যায়।

বিক্ষোভ শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই সীমাবদ্ধ ছিল না। লন্ডনের একটি টেসলা ডিলারের সামনেও মাস্কের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়েছে। সেখানে বিক্ষোভকারীরা মাস্কের ছবি ব্যবহার করে ব্যানার প্রদর্শন করেন, যেখানে তাকে হিটলারের সঙ্গে তুলনা করা হয়।

বিক্ষোভকারীরা জানান, তারা এই প্রতিবাদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে তাদের উদ্বেগের বিষয়ে সচেতন করতে চান।

এই বিক্ষোভের ঢেউয়ের মাঝে, কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনাও ঘটেছে। জার্মানির একটি টেসলা শোরুমে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে, যেখানে সাতটি গাড়ি পুড়ে যায়। যদিও এই ঘটনার সঙ্গে বিক্ষোভের সম্পর্ক এখনো নিশ্চিত নয়, পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।

এছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসে বিক্ষোভের সময় এক ব্যক্তি একটি গাড়ী নিয়ে বিক্ষোভকারীদের দিকে তেড়ে আসে, যেখানে কয়েকজন আহত হন।

অন্যদিকে, মাস্ক তার কোম্পানির ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনো আশাবাদী। তিনি কর্মীদের সঙ্গে এক বৈঠকে জানিয়েছেন, টেসলার ‘মডেল ওয়াই’ গাড়িটি আবারও বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিক্রিত গাড়ি হবে এবং আগামী বছরের মধ্যে বিশ্বব্যাপী টেসলার গাড়ির বিক্রি ১ কোটির বেশি ছাড়িয়ে যাবে।

তবে, বিশ্লেষকদের মতে, মাস্কের এই দ্বৈত ভূমিকা – একদিকে টেসলার প্রধান এবং অন্যদিকে সরকারের উচ্চ পদে আসীন হওয়া – কোম্পানির জন্য একটি ‘সংকটময় মুহূর্ত’ তৈরি করেছে।

টেসলা টেকডাউন নামক একটি সংগঠনের উদ্যোগে এই বিক্ষোভগুলো সংগঠিত হয়েছে। এই সংগঠনের সাথে ছিলেন টেসলার কিছু অসন্তুষ্ট গ্রাহক, অভিনেতা জন কাসাক সহ আরও অনেকে। তারা শনিবারের প্রতিবাদ কর্মসূচিকে শান্তিপূর্ণ রাখার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে, এখন দেখার বিষয়, মাস্ক এই সংকট কিভাবে মোকাবেলা করেন এবং টেসলার ভবিষ্যৎ কী হয়। বিশ্বজুড়ে বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারে টেসলার অবস্থান এখনো বেশ শক্তিশালী, তবে মাস্কের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে এর ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *