টেট্রিস: সোভিয়েত ল্যাব থেকে বিশ্বজয় – কিভাবে একজন উদ্যোক্তা কেজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে গেমটির অধিকার কিনেছিলেন।
১৯৮৮ সাল। আমেরিকার লাস ভেগাসে কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স শো চলছে। সেখানেই প্রথমবার ‘টেট্রিস’ গেমটি দেখেন হেনক রজার্স। খেলোয়াড়দের আকৃষ্ট করার মতো এর সরল ডিজাইন তাকে মুগ্ধ করে।
তিনি সঙ্গে সঙ্গেই বুঝেছিলেন, এটি বিশেষ কিছু। সোভিয়েত ইউনিয়নের গণিতবিদ অ্যালেক্সি পাজিতনভ তৈরি করেন এই গেম। প্রথমে তিনি সোভিয়েত বিজ্ঞান একাডেমির একটি গবেষণা কেন্দ্রে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে কাজ করতেন।
কিন্তু তাঁর তৈরি করা এই ধাঁধার খেলাটি এতটাই জনপ্রিয় হয় যে, এর বিশ্বব্যাপী বাজার তৈরির সম্ভাবনা দেখা দেয়।
টেট্রিসের স্বত্ব কেনা ছিল রজার্সের জন্য এক কঠিন চ্যালেঞ্জ। সেই সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের এমন কোনও গেমিং ইন্ডাস্ট্রি ছিল না। ফলে অধিকার কেনা ছিল রীতিমতো ঝুঁকিপূর্ণ।
গেমটির অধিকার হস্তান্তরের জন্য তিনি ছুটে যান সোভিয়েত ইউনিয়নে। তাঁর এই যাত্রা ছিল অপ্রত্যাশিত ঘটনার সাক্ষী।
সোভিয়েত ইউনিয়নের অভ্যন্তরে প্রবেশ করা এবং সেখান থেকে টেট্রিসের স্বত্ব কেনা ছিল অত্যন্ত জটিল এক প্রক্রিয়া। এই কাজে তাঁকে নানা বাধার সম্মুখীন হতে হয়। সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাবশালী সংস্থা ‘কেজিবি’-র কড়া নজরদারি এড়িয়ে কাজ করতে হয়েছিল তাঁকে।
রজার্সকে সন্দেহের চোখে দেখা হতো, কারণ তিনি ছিলেন একজন বিদেশি।
অবশেষে, নানা নাটকীয়তার মধ্যে দিয়ে রজার্স জাপানে কম্পিউটার রাইটস কিনে নেন। এরপর তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নে যান, যেখানে তিনি এই গেমের স্রষ্টা অ্যালেক্সি পাজিতনভের সঙ্গে পরিচিত হন। তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
টেট্রিসের স্বত্ব কেনা নিয়ে হওয়া ঘটনাগুলো নিয়ে পরবর্তীতে সিনেমাও তৈরি হয়েছে। যেখানে রজার্সের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ট্যারন এগারটন। যদিও রজার্স সিনেমার কিছু বিষয় নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন, তবে নিজের জীবনের গল্প বড় পর্দায় দেখে তিনি আনন্দিত হয়েছিলেন।
টেট্রিসের সাফল্যের পেছনে রজার্সের ব্যবসার দূরদর্শিতা এবং অ্যালেক্সি পাজিতনভের গেম তৈরির দক্ষতা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৯৯৬ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর, তাঁরা দু’জনে মিলে ‘টেট্রিস কোম্পানি’ প্রতিষ্ঠা করেন।
গেমের দুনিয়া থেকে অবসর নেওয়ার পর, হেনক রজার্স পরিবেশ সুরক্ষার কাজে মনোযোগ দেন। বর্তমানে তিনি হাওয়াই দ্বীপে বসবাস করেন এবং সেখানকার ‘ব্লু প্ল্যানেট ফাউন্ডেশন’-এর মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন।
তাঁর লক্ষ্য হল ২০৩০ সালের মধ্যে হাওয়াই দ্বীপকে সম্পূর্ণভাবে দূষণমুক্ত করা।
টেট্রিসের গল্প শুধু একটি গেমের সাফল্যের গল্প নয়, বরং এটি একজন উদ্যোক্তার সাহস, উদ্ভাবনী ক্ষমতা এবং প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। একইসঙ্গে, সোভিয়েত ইউনিয়নের কঠিন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেও কিভাবে একটি গেম বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তুলেছিল, সেই ইতিহাসও এটি তুলে ধরে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান