টেক্সাসের ডিটেনশন সেন্টারে ভয়াবহ চিত্র: শিশুরা খাবার পানির জন্য লড়ছে!

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে অভিবাসী পরিবারগুলোর ডিটেনশন সেন্টারগুলোতে শিশুদের দুরবস্থা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। সেখানকার বন্দী শিশুদের খাবার জল ও স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, এমন অভিযোগ উঠেছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত কিছু নথিতে এই তথ্য উঠে আসার পর বিষয়টি নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

টেক্সাসের ডিটেনশন সেন্টারগুলোতে বন্দীদের দুরবস্থা নিয়ে অভিবাসন বিষয়ক আইনজীবীরা একটি মামলা দায়ের করেছেন। শুক্রবার আইনজীবীদের দাখিল করা নথিতে শিশুদের খাবার জল নিয়ে কাড়াকাড়ি এবং অসুস্থ শিশুদের চিকিৎসা না করানোর মতো ঘটনার বর্ণনা করা হয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসন পরিবারগুলোকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ডিটেনশনে রাখার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার বিরোধিতা করে এই মামলাটি করা হয়েছে।

মামলার নথি অনুযায়ী, ডিটেনশন সেন্টারগুলোতে পর্যাপ্ত জলের অভাব রয়েছে। অনেক সময় জলের জন্য শিশুদের সঙ্গে বড়দের ঝগড়া করতে দেখা যায়।

এমনকি, জলের জন্য শিশুদের সরিয়ে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। এছাড়া, অসুস্থ শিশুদের চিকিৎসা পরিষেবা পেতেও নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

ন্যাশনাল সেন্টার ফর ইয়ুথ ল’র সিনিয়র ইমিগ্রেশন অ্যাটর্নি মিশান ওরোয় বলেন, “বর্তমানে যখন কংগ্রেস শিশু ও পরিবারগুলোকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ডিটেনশনে রাখার বিষয়ে অর্থ বরাদ্দের কথা বিবেচনা করছে, তখন ‘ফ্লোরেস সেটেলমেন্ট’ রক্ষার বিষয়টি আগের চেয়ে অনেক বেশি জরুরি।”

‘ফ্লোরেস সেটেলমেন্ট’ হলো নব্বইয়ের দশকের একটি চুক্তি, যেখানে ফেডারেল হেফাজতে থাকা অভিবাসী শিশুদের নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে রাখার কথা বলা হয়েছে।

আদালতে দাখিল করা নথিতে জানানো হয়েছে, সম্প্রতি ‘রাইসেস’ নামের একটি সংস্থার সঙ্গে কথা বলেছে এমন ৯০টি পরিবারের মধ্যে ৪০টি পরিবার তাদের চিকিৎসা সংক্রান্ত উদ্বেগের কথা জানিয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, ৯ মাস বয়সী এক শিশুকে ফর্মুলা তৈরির জন্য ডিটেনশন সেন্টারের কলের জল ব্যবহার করতে বলা হয়েছিল। সেই জল পান করার পর শিশুটির তিন দিন ধরে ডায়রিয়া হয়েছিল।

এছাড়া, সেখানে থাকা এক কিশোরী জানিয়েছে, জলের জন্য সবাই কিভাবে হুড়োহুড়ি করে।

টেক্সাসের কার্নেস কাউন্টি ইমিগ্রেশন প্রসেসিং সেন্টারে মা ও দুই ছোট ভাইবোনের সঙ্গে থাকা ওই কিশোরী জানায়, “আমরা পর্যাপ্ত জল পাই না।

তারা অল্প কিছু জলের বোতল দেয়, আর সেটার জন্য সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ে। এখানে এমনও হয়েছে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক জল পাওয়ার জন্য আমার ছোট বোনকে সরিয়ে দিয়েছে।”

জানা গেছে অভিবাসন কর্মকর্তাদের ধরপাকড়ের কারণে শিশুদের মধ্যে মানসিক আঘাতের সৃষ্টি হচ্ছে। এমনকি, ডিটেনশন সেন্টারে আসার পর অনেক শিশুর মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ দেখা যাচ্ছে।

এদিকে, ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতির মূল পরিকল্পনাকারী স্টিফেন মিলার জানিয়েছেন, ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) প্রতিদিন অন্তত ৩,০০০ জনকে আটকের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে।

শিশু অধিকার বিষয়ক সংস্থা ‘চিলড্রেনস রাইটস’-এর ডেপুটি লিগ্যাল ডিরেক্টর লিসিয়া ওয়েলচ বলেন, “আটকের সংখ্যা বাড়লে সেখানকার পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।”

বর্তমানে, অভিবাসন বিষয়ক আইনজীবীরা ‘ফ্লোরেস সেটেলমেন্ট’ চুক্তি বাতিল করার চেষ্টা রুখতে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।

আইনজীবীদের মতে, এই চুক্তি বাতিল হলে সরকার শিশুদের অধিকার রক্ষার বিষয়ে নতুন করে নিয়ম তৈরি করতে বাধ্য হবে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *