টেক্সাসে ভয়াবহ বন্যা: শতাধিক মানুষের মৃত্যু, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব।
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে স্বাধীনতা দিবসের ছুটিতে হওয়া ভয়াবহ বন্যায় একশ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে বহু শহর, ভেসে গেছে ঘরবাড়ি।
ভয়াবহ এই দুর্যোগে উদ্ধারকর্মীরা এখনো নিখোঁজদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বৃষ্টির শুরুতেই কেউ বুঝতে পারেনি, এই ঝড় কতটা ভয়াবহ রূপ নেবে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বন্যার সতর্কবার্তা ছিল, কিন্তু এত অল্প সময়ে এত বৃষ্টি হওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
টেক্সাসের কিছু অঞ্চলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পুরো গ্রীষ্মকালের সমান বৃষ্টিপাত হয়েছে। হ্যান্ট শহরে মাত্র তিন ঘণ্টায় প্রায় ১৬.৫ সেন্টিমিটার বৃষ্টি হয়, যা এলাকার জন্য একশ বছরে একবার হওয়া বৃষ্টির ঘটনা।
প্রবল বৃষ্টির কারণে সেখানকার শুষ্ক মাটি পানি শোষণ করতে পারেনি, ফলে দ্রুত নদীগুলোতে পানি বাড়তে শুরু করে। এর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গ্যুয়াদালাপ নদী তীরবর্তী এলাকাগুলো।
জানা গেছে, ক্যাম্প মিস্টিক সহ অন্তত ১৮টি শিশু কিশোরের ক্যাম্প ছিল এই অঞ্চলে, যার অনেকগুলোই ছিল বন্যাপ্রবণ এলাকায়। ক্যাম্প মিস্টিকের প্রায় ৭৫০ জন কিশোর-কিশোরী বন্যায় আটকা পড়ে।
এর মধ্যে ২৬ জন কিশোর-কিশোরী এবং ১ জন কর্মী নিহত হয়েছে। এখনো ১১ জন নিখোঁজ রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়ছে, যার ফলে আবহাওয়ার চরম রূপ দেখা যাচ্ছে। ঘন ঘন অতিবৃষ্টি, বন্যা, এবং ঘূর্ণিঝড়ের মতো ঘটনাগুলো বাড়ছে।
টেক্সাসের এই বন্যাও তারই একটি উদাহরণ।
বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির কারণগুলোর মধ্যে ছিল খরার কারণে মাটির জল ধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়া। এছাড়া, অনেক জায়গায় রাতে বন্যা হওয়ায় মানুষজন সতর্কবার্তা পাওয়া সত্ত্বেও দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারেনি।
বিশেষ করে হ্যান্টের মতো গ্রামীণ এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক দুর্বল থাকায় যোগাযোগও কঠিন হয়ে পড়েছিল।
আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, স্থানীয় সময় ভোর ৪টার দিকে জরুরি বন্যা সতর্কতা জারি করা হয়। এর আগে রাত ১টা ১৪ মিনিটেও সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু রাতের অন্ধকারে অনেকেই বন্যার ভয়াবহতা বুঝতে পারেন নি। টেক্সাসের এই দুর্যোগ শুধু একটি রাজ্যের ক্ষতি নয়, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা আরও একবার মনে করিয়ে দেয়।
বাংলাদেশেও বর্ষাকালে প্রায়ই বন্যা দেখা যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভবিষ্যতে এর তীব্রতা আরও বাড়তে পারে।
তাই দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের আরও বেশি প্রস্তুতি নেওয়া দরকার। নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করছি, এবং এই কঠিন সময়ে টেক্সাসের জনগণের প্রতি আমাদের সমবেদনা জানাচ্ছি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন