বন্যার ধ্বংসলীলার মাঝে! ডাইনোসরের পায়ের ছাপ খুঁজে পাওয়া গেল!

টেক্সাসের বন্যায় ভেসে যাওয়া ধ্বংসস্তূপের নিচে লুকানো, কোটি বছর পুরোনো ডাইনোসরের পদচিহ্ন আবিষ্কার।

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের একটি অঞ্চলে সম্প্রতি ভয়াবহ বন্যা হয়। এই বন্যায় ভেসে যাওয়া ধ্বংসস্তূপের নিচে বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন প্রায় ১১ কোটি বছর আগের ডাইনোসরের পায়ের ছাপ।

টেক্সাসের ট্রাভিস কাউন্টিতে স্যান্ডি ক্রিক এলাকার কাছে পাওয়া গেছে এই জীবাশ্ম।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অঞ্চলের ভূমি সাধারণত পাথুরে এবং রুক্ষ প্রকৃতির। জুলাই মাসের প্রথম দিকে হওয়া বন্যায় এখানকার দৃশ্যপট একেবারে পাল্টে যায়। বন্যার জলের স্রোতে মাটি সরে যাওয়ার ফলে ১৫টির বেশি বিশাল আকারের, তিনটি আঙুলযুক্ত ডাইনোসরের পায়ের ছাপ উন্মোচিত হয়েছে।

এই আবিষ্কারের ফলে বিজ্ঞানীরা সেই সময়ের প্রাণী জগৎ সম্পর্কে নতুন তথ্য জানতে পারবেন।

ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস অ্যাট অস্টিনের জ্যাকসন স্কুল মিউজিয়াম অফ আর্থ হিস্টোরির জীবাশ্মবিদ ম্যাথিউ ব্রাউন এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন।

তিনি জানান, “পাথরগুলোর ওপর পাওয়া ছাপগুলো মাংসাশী ডাইনোসরের, যাদের আকৃতি *Acrocanthosaurus*-এর মতো ছিল।” এই প্রজাতিটি প্রায় ৩৫ ফুট লম্বা, দ্বিপদী এবং মাংস খেত।

প্রতিটি পায়ের ছাপ প্রায় ১৮ থেকে ২০ ইঞ্চি লম্বা।

বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, স্যান্ডি ক্রিকের মতো জলধারাগুলি “গ্লেন রোজ ফর্মেশন” নামক একটি চুনাপাথরের স্তরকে কেটে দিয়েছে, যেখানে এই পায়ের ছাপগুলো বিদ্যমান।

এই স্তরটি প্রায় ১১ কোটি বছর পুরোনো। তাই, ডাইনোসরের পায়ের ছাপগুলোর বয়সও এত বছর বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

বর্তমানে, কর্মকর্তারা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিষ্কার করার কাজ করছেন।

বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেছেন, এই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানের সময় যেন ডাইনোসরের পদচিহ্নগুলোর কোনো ক্ষতি না হয়। তারা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা কার্ল স্টোভারের তোলা ছবিগুলোতে দেখা যায়, পায়ের ছাপগুলো বেশ বড় আকারের এবং পাথরের মধ্যে গভীরভাবে প্রোথিত।

এই অঞ্চলের বন্যাপ্রবণতার কারণে, বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ভবিষ্যতে এখানে আরও গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হতে পারে।

টেক্সাসের এই আবিষ্কারটি শুধু বিজ্ঞানীদের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি সাধারণ মানুষের মধ্যেও ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করেছে।

ট্রাভিস কাউন্টি, ডাইনোসর ভ্যালি স্টেট পার্ক থেকে প্রায় ৩২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই পার্কটিতেও বহু ডাইনোসরের পায়ের ছাপ বিদ্যমান।

ফলে, এই অঞ্চলের ঐতিহাসিক গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা খুব শীঘ্রই এই স্থানটিতে ফিরে এসে পদচিহ্নগুলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ ও থ্রিডি ইমেজিং করার পরিকল্পনা করছেন।

ম্যাথিউ ব্রাউন আরও জানান, তারা এই পায়ের ছাপগুলো থেকে জানতে চান, এখানে ঠিক কতগুলো ডাইনোসর ঘুরে বেড়াত এবং তারা দলবদ্ধভাবে থাকত নাকি একা বিচরণ করত।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *