টেক্সাসের অজানা এক আঙুর ক্ষেত্র: বাংলাদেশের জন্য কি কোনো শিক্ষণীয় বিষয় আছে?
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের উত্তর-পশ্চিম অংশে অবস্থিত লিয়ানো এস্তাকাডো। বিশাল এই অঞ্চলে রয়েছে দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ, যেখানে ফলানো হয় নানান ধরনের শস্য। এখানকার প্রধান আকর্ষণ হলো আঙুর চাষ।
হয়তো অনেকেই জানেন না, টেক্সাসের সবচেয়ে বড় আঙুর উৎপাদন অঞ্চলটি কিন্তু এই লিয়ানো এস্তাকাডোতেই অবস্থিত।
টেক্সাস হাই প্লেইনস আমেরিকান ভিটিকালচারাল এরিয়া (AVA) নামে পরিচিত এই অঞ্চলে টেক্সাসের প্রায় ৮০ শতাংশ আঙুর উৎপাদিত হয়। টেক্সাসের হিল কান্ট্রি অঞ্চলটি হয়তো অনেকের কাছে পরিচিত, তবে আঙুর উৎপাদনের দিক থেকে হাই প্লেইনস-এর ধারে কাছেও নেই সেটি।
বিশাল এই অঞ্চলটি প্রায় ৮০ লক্ষ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত।
যদিও এই অঞ্চলের ভূমি কিছুটা সমতল, পশ্চিম দিকে গেলে এর উচ্চতা বেড়ে যায়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর গড় উচ্চতা প্রায় ২,৮০০ থেকে ৪,০০০ ফুট পর্যন্ত।
তুলনামূলকভাবে কম বৃষ্টিপাত, উপযুক্ত তাপমাত্রা এবং শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে আঙুর চাষের জন্য এটি একটি আদর্শ স্থান।
লুবক শহরে অবস্থিত ম্যাকফারসন সেলার্সের হসপিটালিটি ডিরেক্টর ও সোমেলিয়ার ম্যাডিসন রেগিস হোয়াইট জানান, “এখানে রাতের তাপমাত্রা বেশ শীতল থাকে, যা গরম আবহাওয়ার মধ্যেও আঙুর সতেজ রাখতে সাহায্য করে। কম আর্দ্রতা থাকায় রোগ, পোকামাকড়ের উপদ্রব এবং পচন থেকেও আঙুর রক্ষা করা যায়।
এছাড়াও এখানকার বেলে দোআঁশ মাটি গাছের শিকড়ের জন্য খুবই উপযোগী।”
টেক্সাসের গ্রীষ্মকাল বেশ উষ্ণ হলেও, এই শুষ্ক ও গরম আবহাওয়াই আঙুরকে পরিপক্ক করে তোলে এবং সঠিক মাত্রায় চিনি উৎপাদনে সহায়তা করে, যা ওয়াইনের অম্লতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
এখানকার আঙুর শীতের শিশির, বসন্তের কুয়াশা এবং আবহাওয়ার পরিবর্তনশীলতা—সবকিছুই সহ্য করতে পারে। এখানে ৭০টির বেশি জাতের আঙুর ফলানো হয়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—টেম্প্রানিলো, সাঙ্গিওভেজ, মুরভেদ্র, ক্যাবারনেট সাভিগনন, ভায়োগনিয়ার এবং পিনোট নর।
১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে এখানে আঙুর চাষ শুরু হলেও, আনুষ্ঠানিকভাবে এই অঞ্চলটি ‘AVA’ স্বীকৃতি পায় ১৯৯৩ সালে। এখানকার উৎপাদিত আঙুর রাজ্যের বিভিন্ন ওয়াইনারিতে সরবরাহ করা হয়। তবে, এখানকার সেরা আঙুর থেকে তৈরি হওয়া ওয়াইন সরাসরি মাঠ থেকে সংগ্রহ করা যেতে পারে।
লুবকে অবস্থিত লিয়ানো এস্তাকাডো ওয়াইনারি টেক্সাসের দ্বিতীয় প্রাচীনতম এবং হাই প্লেইনস অঞ্চলের সবচেয়ে পুরনো ওয়াইনারি। ১৯৭৬ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
তারা স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত আঙুর ব্যবহার করে, যার মধ্যে তাদের ‘ক্লে ব্লক’ মার্লোট বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এটি ২০২৪ সালের ‘লোন স্টার ইন্টারন্যাশনাল ওয়াইন কম্পিটিশন’-এ স্বর্ণপদক জিতেছে।
এছাড়া, এখানকার ওয়াইনারিতে রয়েছে একটি আকর্ষণীয় tasting room এবং আউটডোরে বসে ওয়াইন উপভোগ করার ব্যবস্থা।
লুবকের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে ম্যাকফারসন সেলার্স। আধুনিক টেক্সাস ওয়াইন শিল্পের অগ্রদূত ক্লিনটন ‘ডক’ ম্যাকফারসনের প্রতি সম্মান জানিয়ে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
ডক ম্যাকফারসন এখানকার গরম ও শুষ্ক আবহাওয়ার সঙ্গে মানানসই আঙুরের জাত পরীক্ষা করে হাই প্লেইনস-এর ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। ম্যাকফারসন সেলার্স মূলত সাঙ্গিওভেজ উৎপাদন করে, তবে এখানে সাদা ও রোজ ওয়াইনও পাওয়া যায়।
হাই প্লেইনস অঞ্চলটি হিল কান্ট্রি ওয়াইনারিগুলোরও পছন্দের জায়গা, কারণ রাজ্যের অধিকাংশ আঙুর তো এখানেই উৎপন্ন হয়।
বেন্ডিং ব্রাঞ্চ ওয়াইনারির জেনারেল ম্যানেজার জেনিফার সেরনোসেক বলেন, “নারা ভিনিয়ার্ডস এবং নিউসম ভিনিয়ার্ডস থেকে আসা পেটিট ভারডট-এর মান দেখে আমি মুগ্ধ। টেক্সাসের উষ্ণ আবহাওয়ায় এই আঙুরের ফলন বেশ ভালো হয়।
এর স্বাদ খুবই চমৎকার এবং ব্ল্যাক চেরি ও গাঢ় ফলের মিশ্রণে তৈরি হয় অসাধারণ ওয়াইন।”
যদিও এই অঞ্চলটি এখনো ন্যাপা বা সোনার মতো পরিচিতি লাভ করেনি, তবে ধীরে ধীরে এটি বিভিন্ন পুরস্কার ও স্বীকৃতি অর্জন করছে।
ম্যাডিসন রেগিস হোয়াইট বলেন, “টেক্সাস হাই প্লেইনস AVA প্রমাণ করছে যে তারা বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ওয়াইন অঞ্চলগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে। এখানকার চাষিরা প্রতি বছর অভিজ্ঞতা অর্জন করছেন, জমির পরিমাণ বাড়ছে এবং ওয়াইন প্রস্তুতকারকরা উন্নত মানের ওয়াইন তৈরি করতে দক্ষতা অর্জন করছেন।”
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, এই অঞ্চলের কৃষি প্রযুক্তি ও কৌশলগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। যেমন—আঙুর চাষের জন্য এখানকার মাটির ব্যবস্থাপনা, সেচ ব্যবস্থা এবং বিভিন্ন জাতের ফল উৎপাদনের কৌশল—এগুলো বাংলাদেশের কৃষকদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
এছাড়াও, ওয়াইন উৎপাদন শিল্পের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও বিবেচনা করা যেতে পারে।
তথ্য সূত্র: Travel and Leisure