ওয়াইনে ‘মারাত্মক’ রাসায়নিক! চাঞ্চল্যকর তথ্য, সচেতন হওয়ার আহ্বান

শিরোনাম: ইউরোপীয় ওয়াইনে ‘চিরস্থায়ী রাসায়নিক’-এর উদ্বেগজনক বৃদ্ধি, খাদ্য সুরক্ষার প্রশ্ন।

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় ইউরোপীয় ওয়াইনে ‘চিরস্থায়ী রাসায়নিক’ নামে পরিচিত একটি ক্ষতিকর উপাদানের মাত্রা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে বলে জানা গেছে। এই রাসায়নিকটি মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এবং এর ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।

গবেষকরা বলছেন, এটি খাদ্য নিরাপত্তা এবং পরিবেশের জন্য একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, ট্রাইফ্লুরোএসিটিক অ্যাসিড (TFA) নামক এই রাসায়নিকটি মূলত PFAS (পার- এবং পলিফ্লুরোঅ্যালকাইল পদার্থ) নামক রাসায়নিকের একটি ভাঙন পণ্য। PFAS-কে ‘চিরস্থায়ী রাসায়নিক’ বলা হয় কারণ এটি সহজে পরিবেশে ধ্বংস হয় না এবং দীর্ঘদিন ধরে সেখানে বিদ্যমান থাকে।

PFAS-এর কিছু উপাদানের প্রজনন স্বাস্থ্যের উপরও সম্ভাব্য ঝুঁকি রয়েছে। গবেষণায় ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলের ওয়াইন পরীক্ষা করা হয়েছে এবং দেখা গেছে, ২০১৮ সালের আগের উৎপাদিত ওয়াইনগুলোতে TFA-এর উপস্থিতি ছিল নগণ্য, কিন্তু ২০১০ সালের পর থেকে উৎপাদিত ওয়াইনগুলোতে এর মাত্রা দ্রুত বেড়েছে।

পেস্টিসাইড অ্যাকশন নেটওয়ার্ক ইউরোপ (Pesticide Action Network Europe) নামক একটি সংস্থার গবেষকরা এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন। তারা ৪9 বোতল বাণিজ্যিক ওয়াইন পরীক্ষা করে TFA দূষণের মাত্রা পরিমাপ করেছেন।

তাদের অনুসন্ধানে দেখা যায়, জৈব এবং প্রচলিত উভয় ধরনের ওয়াইনেই TFA-এর উপস্থিতি রয়েছে, তবে জৈব ওয়াইনগুলোতে এর মাত্রা তুলনামূলকভাবে কম। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, যে ওয়াইনগুলোতে TFA-এর ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি, সেগুলোতে কীটনাশকের অবশিষ্টাংশও বেশি ছিল।

এই কারণে, গবেষকরা ইউরোপীয় কমিশন এবং ইইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে PFAS কীটনাশক নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

TFA-এর প্রধান উৎস হিসেবে চিহ্নিত করা হয় ফ্লোরিনযুক্ত রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস (F-gases) এবং PFAS কীটনাশক। ১৯৮৭ সালের মন্ট্রিল প্রোটোকলের পর যখন ওজন-ক্ষয়কারী পদার্থ যেমন ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFC) নিষিদ্ধ করা হয়, তখন F-gases-এর ব্যবহার বৃদ্ধি পায়।

অন্যদিকে, ১৯৯০-এর দশকে ইউরোপে PFAS কীটনাশকের ব্যবহার ব্যাপকতা লাভ করে। গবেষকরা বলছেন, TFA প্রাকৃতিক উপায়ে সহজে ভেঙে যায় না এবং পানি থেকে এটি অপসারণ করা কঠিন ও ব্যয়বহুল।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, TFA-এর ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি একটি ‘গ্রহগত সীমানা’র জন্য হুমকি স্বরূপ। এর অর্থ হল, এই ধরনের রাসায়নিকের ব্যাপক বিস্তার পৃথিবীর পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াগুলোতে বিপর্যয়কর প্রভাব ফেলতে পারে।

যদি এখনই PFAS কীটনাশকের ব্যবহার বন্ধ করা হয়, তবুও পানি এবং অন্যান্য স্থানে TFA-এর ঘনত্ব কয়েক বছর ধরে বাড়তে থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এই গবেষণা খাদ্য নিরাপত্তা এবং পরিবেশ দূষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ চিত্র তুলে ধরেছে। বাংলাদেশেও কীটনাশকের ব্যবহার এবং পানি দূষণ একটি উদ্বেগের বিষয়।

এই ধরনের রাসায়নিক দূষণ থেকে বাঁচতে হলে, আমাদের সচেতন হতে হবে এবং পরিবেশবান্ধব উপায়ে খাদ্য উৎপাদন ও ব্যবহারের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *