থাই রান্নার অবিচ্ছেদ্য অংশ: এক বিতর্কিত ভেষজ যেভাবে জয় করলো সবার মন

শিরোনাম: ধনিয়া পাতা (Coriander): থাই রান্নায় এক অপরিহার্য উপাদান

রান্না একটি সংস্কৃতি, যেখানে বিভিন্ন উপাদান মিলেমিশে তৈরি হয় এক একটি বিশেষ স্বাদ। আর এই স্বাদের জগতে, কিছু উপাদান থাকে যা একটি রান্নার অপরিহার্য অংশ হয়ে ওঠে।

তেমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ধনিয়া পাতা (coriander)। থাই রান্নার জগতে এই ধনিয়া পাতা যেন এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা খাবারের স্বাদ ও গন্ধে যোগ করে ভিন্ন মাত্রা।

থাইল্যান্ডের খাদ্যরসিকদের কাছে ধনিয়া পাতার আবেদন অনেক। পাতা থেকে শুরু করে এর শিকড়, বীজ—সবকিছুই থাই রান্নায় ব্যবহার করা হয়। সেখানকার বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে, যেমন ব্যাংককের বো.লান রেস্টুরেন্ট-এ, ঐতিহ্যবাহী থাই খাবারে ধনিয়া পাতার ব্যবহার চোখে পড়ার মতো।

মাছের একটি বিশেষ পদে, যা শুকনো চালের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি করা হয়, সেখানেও এর ব্যবহার হয়। শুধু পাতা নয়, এর কাণ্ড ব্যবহার করা হয় স্যুপে এবং বীজের ব্যবহার হয় মশলার পেস্টে।

ধনিয়া পাতা শুধু স্বাদের জন্য নয়, এর রয়েছে একটি বিশেষ ঘ্রাণ। অনেকের মতে, এর স্বাদ সাবানের মতো, তাই তারা এটি এড়িয়ে চলেন।

তবে থাইল্যান্ডে এর ব্যবহার এত বেশি যে, এটি ছাড়া যেন থাই রান্নার কথা ভাবাই যায় না।

ধনিয়া পাতার উৎপত্তিস্থল কিন্তু থাইল্যান্ড নয়। এর আদি স্থান হলো ভূমধ্যসাগর ও মধ্যপ্রাচ্য। প্রায় ৫০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মিশরে এর চাষ হতো, যেখানে এটিকে পবিত্র হিসেবে গণ্য করা হতো।

এরপর ইউরোপীয় ব্যবসায়ীদের হাত ধরে এটি থাইল্যান্ডে আসে, অনেকটা আমাদের দেশে মরিচ আসার মতোই।

বো.লান রেস্টুরেন্টের শেফ বো সংভিসা বলেন, “ধনিয়া পাতার শিকড় খাবারের স্বাদ বাড়ায় এবং মশলার স্বাদকে একত্রিত করে। পাতা স্যুপ ও সালাদে সতেজতা যোগ করে।”

থাই রান্নায় ধনিয়া পাতার এই বহুমুখী ব্যবহার সত্যিই অসাধারণ। শুধু থাই নয়, মেক্সিকান রান্নার উপরেও ধনিয়া পাতার প্রভাব রয়েছে। ব্যাংককের ডেলিয়া রেস্টুরেন্টের শেফ গ্যাব্রিয়েলা এসপিনোসা সালাদ ও গুয়াকামোলে পাতা ব্যবহার করেন, এবং কাণ্ড ব্যবহার করেন টেক্সচারের জন্য।

তিনি তার নিজস্ব ‘গাবি मसाला’ তৈরিতেও এটি ব্যবহার করেন।

শেফ এসপিনোসা থাইল্যান্ডে আসার পর এখানকার ধনিয়া পাতার শিকড়ের ব্যবহার শিখেছেন এবং তা তার রান্নায় যুক্ত করেছেন। তার তৈরি টেটেলা নামক একটি খাবারে, যা মাশরুম দিয়ে তৈরি এবং সবুজ সস দিয়ে পরিবেশন করা হয়, ধনিয়া পাতার সব অংশ ব্যবহার করা হয়।

তবে সবার কাছে যে ধনিয়া পাতা প্রিয়, তা নয়। কেউ কেউ তাদের খাবারে এটি পছন্দ করেন না।

কিন্তু থাই রান্নার ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব অনেক বেশি। ব্লু এলিফ্যান্ট রেস্টুরেন্টের শেফ নূরোর সোমানি স্টেপ বলেন, “থাইরা ধনিয়া পাতা ছাড়া বাঁচতে পারে না।”

তিনি আরও যোগ করেন, যারা দেশের বাইরে থাকেন, তাদের জন্য এটি যেন “ঘরের স্বাদ”।

ধনিয়া পাতা শুধু একটি উপাদান নয়, এটি থাই সংস্কৃতির একটি অংশ। এর স্বাদ, ঘ্রাণ এবং ব্যবহারের ভিন্নতা একে করে তুলেছে রান্নার জগতে একটি বিশেষ স্থান।

এটি থাই রান্নার স্বাদ ও গন্ধে যোগ করে এক নতুন মাত্রা, যা খাদ্যরসিকদের মন জয় করে।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *