পর্তুগিজদের হাত ধরে থাইল্যান্ডের খাদ্য সংস্কৃতিতে লেগেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া। ১৫১১ সালে পর্তুগিজরা প্রথম পশ্চিমা শক্তি হিসেবে প্রাচীন সিয়াম রাজ্যের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করে। এরপর থেকেই থাইল্যান্ডের খাদ্যভান্ডারে যুক্ত হতে থাকে নতুন সব উপকরণ, রান্নার নতুন কৌশল।
ব্যাংককের কুডি চীন এলাকা, যা ‘লিটল পর্তুগাল’ নামেও পরিচিত, সেই পরিবর্তনের সাক্ষী।
পর্তুগিজদের হাত ধরে থাইল্যান্ডে আসে টমেটো, কাঁচালঙ্কা, চীনাবাদাম, আলু এবং ভুট্টার মতো খাদ্য উপাদান। থাই ভাষায় আলুকে ‘মান ফারাং’ বা ‘পশ্চিমের আলু’ বলা হয়। এমনকি পেঁপের থাই নাম ‘মালাকোর’ এসেছে পর্তুগিজদের একটি বাণিজ্য কেন্দ্র, মালাক্কা থেকে।
শুধু খাদ্য উপাদানই নয়, তারা নিয়ে আসে রান্নার নতুন পদ্ধতিও। মাংস ও মুরগির ঝোল রান্নার কায়দা, ভাজাভুজি এবং স্টাফিংয়ের মতো কৌশলগুলোও তাদেরই অবদান।
থাই মিষ্টান্নের জগৎেও পর্তুগিজদের অবদান অনস্বীকার্য। আগেকার দিনে থাই মিষ্টি তৈরি হতো চালের গুঁড়ো, তাল চিনি এবং নারকেল কোরা দিয়ে।
এর সঙ্গে সুগন্ধের জন্য ব্যবহার করা হতো জুঁই ফুল অথবা পান পাতা। পর্তুগিজদের হাত ধরেই মিষ্টিতে ডিমের ব্যবহার শুরু হয়। গরুকে পবিত্র জ্ঞান করার কারণে দুগ্ধজাত পণ্যের পরিবর্তে নারকেল দুধ ব্যবহারের চলও শুরু হয়।
থাই রন্ধনশৈলীতে মারিয়া গুইওমার দে পিনহা, যিনি ‘থাও থং কিপ মা’ নামেও পরিচিত, তিনি পর্তুগিজ-জাপানি বংশোদ্ভূত ছিলেন। সপ্তদশ শতকে রাজা নারাইয়ের শাসনামলে তিনি ডিমের তৈরি মিষ্টির প্রচলন করেন এবং বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় থাই ডেজার্ট তৈরি করেন।
তার তৈরি ‘ফই থং’ (সোনার সুতো) ও ‘থং ইয়িপ’ (সোনার ফোঁটা)-এর মতো মিষ্টিগুলো এখনো থাইল্যান্ডে খুব জনপ্রিয়।
কুডি চীন এলাকার রেস্টুরেন্টগুলোতে আজও পর্তুগিজ-অনুপ্রাণিত খাবার পাওয়া যায়। এখানে খানম ফারাং কুডি চীন নামের একটি পর্তুগিজ-থাই স্পঞ্জ কেকও পাওয়া যায়।
এই এলাকার ‘খানম জীন গ্যাং গাই কুয়া’ নামের একটি বিশেষ খাবারও বেশ পরিচিত, যা পর্তুগিজ-বার্মিজ সংস্কৃতির মিশ্রণে তৈরি।
যারা ব্যাংককে পর্তুগিজ-অনুপ্রাণিত খাবার চেখে দেখতে চান, তাদের জন্য কয়েকটি ঠিকানা হলো: কাওপিনং, যেখানে ‘ফই থং’, ‘থং ইয়িপ’ এবং ‘থং ইয়োড’ পাওয়া যায়।
এরপর রয়েছে সানেহ জান নামের একটি মিশেলিন-তারকা রেস্টুরেন্ট, যেখানে রাজকীয় ঘরানার নানা পদ পরিবেশন করা হয়। এছাড়া, থানুসিংহা বেকারি হাউস-এর খানম ফারাং কুডি চীন এবং বান সাকুলথং-এর মতো জায়গাগুলোতেও এই ধরনের খাবারের স্বাদ নেওয়া যেতে পারে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক