শিরোনাম: থাইল্যান্ড-ক্যাম্বোডিয়া সীমান্তে উত্তেজনা: সংঘাতের কারণ ও রাজনৈতিক প্রভাব
গত বৃহস্পতিবার থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া সীমান্তে বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয়, যা উভয় দেশের মধ্যে বিদ্যমান দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিবাদের একটি চরম রূপ। এই ঘটনায় অন্তত নয় জন থাই নাগরিক নিহত এবং ১৪ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। উভয় দেশই সীমান্তে সেনা তৎপরতা বাড়িয়েছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা চালাচ্ছে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় এই সশস্ত্র সংঘাত নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
মূলত, দুই দেশের সীমান্ত চিহ্নিতকরণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা আসা বিরোধের জের ধরেই এই উত্তেজনা। ১৯০৭ সালে ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনামলে তৈরি করা একটি মানচিত্রকে কেন্দ্র করে এই বিবাদের সূত্রপাত।
কম্বোডিয়া এই মানচিত্র ব্যবহার করে নিজেদের ভূখণ্ডের দাবি জানায়, অন্যদিকে থাইল্যান্ডের দাবি, এই মানচিত্র সঠিক নয়।
সংঘাতের সূত্রপাত হয় মে মাসে, যখন উভয় দেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে গোলাগুলি হয়। যদিও উভয় পক্ষই আত্মরক্ষার্থে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানায়, এরপরও সীমান্তে উত্তেজনা কমেনি।
এর ফলস্বরূপ, থাইল্যান্ড সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করে, যা বাণিজ্য এবং সাধারণ মানুষের চলাচলকে ব্যাহত করে। কম্বোডিয়াও থাই সিনেমা ও টিভি অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ করে এবং থাই পণ্য আমদানি বন্ধ করে দেয়।
এই ঘটনার রাজনৈতিক প্রভাবও তাৎপর্যপূর্ণ। থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্যাংটংতার্ন শিনাওয়াত্রাকে সীমান্ত বিবাদ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে সাময়িকভাবে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, তিনি এক গোপন টেলিফোন আলাপে কম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেনকে ‘কাকা’ সম্বোধন করে থাই সামরিক নেতৃত্বের সমালোচনা করেছিলেন, যা অনেকের কাছে দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি অসম্মানজনক বলে মনে হয়েছে। এই ঘটনার জেরে তাঁর দল ‘ফ্যু থাই পার্টি’র জোটসঙ্গী দল সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে, এই অঞ্চলের সবচেয়ে বিতর্কিত স্থান হলো প্রিয়েহ বিহার মন্দির। ১৯৬২ সালে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (International Court of Justice) এই মন্দির এলাকার মালিকানা কম্বোডিয়াকে প্রদান করে।
যদিও থাইল্যান্ড এই রায় মেনে নিতে নারাজ, এবং সীমান্ত নিয়ে বিবাদ অব্যাহত রয়েছে। কম্বোডিয়া পুনরায় আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হলেও, থাইল্যান্ড আদালতের এখতিয়ার মানতে রাজি নয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সীমান্ত বিরোধের এই দীর্ঘসূত্রিতা এবং সাম্প্রতিক সশস্ত্র সংঘাত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য উদ্বেগের কারণ। দুই দেশের মধ্যে আলোচনা ও কূটনৈতিক সমাধানের মাধ্যমে এই সংকট নিরসনের চেষ্টা করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস