বিধ্বংসী ভূমিকম্প: থাইল্যান্ডে কি ভয়াবহ পরিস্থিতি?

মায়ানমারে ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্প, থাইল্যান্ডেও প্রভাব, বাড়ছে মৃতের সংখ্যা

শুক্রবার, মায়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ম্যান্ডালয়ের কাছে ৭.৭ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এর ধাক্কা লাগে প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডেও। ভূমিকম্পের পর একাধিক পরাঘাত অনুভূত হয়েছে।

আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোর খবর অনুযায়ী, ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত অন্তত ২০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছেন আরও অনেকে। তবে, মায়ানমারে বর্তমানে গৃহযুদ্ধ চলায় হতাহতের সঠিক সংখ্যা জানা কঠিন।

ভূমিকম্পের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক। সেখানকার জনপ্রিয় চাতুচাক মার্কেটের একটি ৩৩ তলা ভবন ধসে পড়েছে। কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে জানা গেছে, এখনো ৭০ জন নিখোঁজ রয়েছেন এবং ২০ জন একটি লিফটের মধ্যে আটকা পড়েছেন। তাদের জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা এখনো পর্যন্ত জানা যায়নি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অঞ্চলে ভূমিকম্প একটি সাধারণ ঘটনা। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক ও জলবায়ু বিষয়ক অধ্যাপক বিল ম্যাকগুইর জানিয়েছেন, “মায়ানমার বিশ্বের অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। এই ভূমিকম্প তাই অপ্রত্যাশিত নয়। এটি সম্ভবত সাগাইং ফল্টে হয়েছে, যা দুটি টেকটনিক প্লেটের মাঝে অবস্থিত এবং জনবহুল এলাকাগুলোর পাশ দিয়ে গেছে।” তিনি আরও যোগ করেন, “গত ৭৫ বছরের মধ্যে মায়ানমারের মূল ভূখণ্ডে এটি সম্ভবত সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প। এর গভীরতা কম হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়ছে। ভবনগুলোর মান এই ধরনের কম্পন সহ্য করার মতো নাও হতে পারে, ফলে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

তবে, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পায়েতোংতার্ন সিনাওয়াত্রা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “ব্যাংককের ভবনগুলো নির্ধারিত মানের চেয়ে বেশি শক্তিশালী করে তৈরি করা হয়েছে। ভূমিকম্প আরও শক্তিশালী হলেও এগুলো টিকে থাকতে সক্ষম। বর্তমানে, পরীক্ষার পর দেখা গেছে সব ভবন নিরাপদ।” তিনি আরও জানান, “শুধু নির্মাণাধীন ভবনগুলোর কিছু সমস্যা হয়েছে, যেগুলোর স্থিতিশীলতা এবং দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে।

ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, “আমি মায়ানমার ও থাইল্যান্ডের প্রতি সংহতি জানাচ্ছি। মালয়েশিয়া আমাদের প্রতিবেশী এবং আসিয়ান (ASEAN) সদস্য দেশগুলোর পাশে আছে। আমরা প্রয়োজনে মানবিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত।

থাইল্যান্ড ভ্রমণে যাওয়া পর্যটকদের জন্য উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। দেশটির বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, “ইতিমধ্যেই ৬টি বিমানবন্দরের নিরাপত্তা পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে এবং স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছে।” তবে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকককে দুর্যোগপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে, যার ফলে সেখানকার গণপরিবহন ব্যবস্থা, বিশেষ করে বাস ও বৈদ্যুতিক ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নৌপরিবহন সংস্থাগুলো যাত্রীসেবার জন্য তাদের কার্যক্রম বাড়িয়েছে। এছাড়া, ট্রেনের চলাচলও কিছু সময়ের জন্য বিলম্বিত হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এখনো কোনো সহায়তার ঘোষণা আসেনি।

বর্তমানে উদ্ধারকাজ চলছে এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে নিয়মিত আপডেট পাওয়া যাচ্ছে।

তথ্য সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লিজার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *