থাইল্যান্ডে রাজনৈতিক অস্থিরতা : নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের তোড়জোড়।
থাইল্যান্ডে রাজনৈতিক সংকট নিরসনের লক্ষ্যে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। শুক্রবার আইনপ্রণেতারা মিলিত হয়ে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করেন। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো দ্রুত পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে নির্বাচনের প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছে।
২০২৩ সালের সাধারণ নির্বাচনে মনোনীত পাঁচ জন প্রার্থী এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্য। ভূমিজাইথাই পার্টির নেতা আনুতিন চার্নভিরাকুলকে সবচেয়ে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দেখা হচ্ছে।
গত সপ্তাহে দেশটির সাংবিধানিক আদালত সাবেক প্রধানমন্ত্রী পেটংতার্ন শিনাওয়াত্রাকে নৈতিক বিধি লঙ্ঘনের দায়ে অপসারণ করে। কম্বোডিয়ার সেনেট প্রেসিডেন্ট হুন সেনের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যা নিয়ে টেলিফোনে কথা বলার কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর আগে, জুলাই মাসে দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে পাঁচ দিনের সশস্ত্র সংঘর্ষ হয়, যা বেশ প্রাণঘাতী ছিল।
আনুতিন এবং ফেউ থাই পার্টির প্রার্থী চাইকাসেম নিটিসিরি আনুষ্ঠানিকভাবে এই নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন। সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য তাদের কমপক্ষে ২৪৭ ভোট প্রয়োজন।
বর্তমানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব পালন করা ফেউ থাই পার্টি মঙ্গলবার পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু রাজার প্রিভি কাউন্সিলের আপত্তির কারণে তাদের সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা হয়।
সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও বিচারমন্ত্রী চাইকাসেম বৃহস্পতিবার বলেছেন, নির্বাচিত হলে তিনি শপথ নেওয়ার পরপরই পার্লামেন্ট ভেঙে দেবেন।
আনুতিন জানিয়েছেন, তিনি তার দল ও মিত্রদের কাছ থেকে ১৪৬ ভোট নিশ্চিত করেছেন। পিপলস পার্টি জানিয়েছে, তাদের ১৪৩ জন আইনপ্রণেতাও তাকে সমর্থন করবেন। ফলে, বর্তমানে পার্লামেন্টের ৪৯২ জন সদস্যের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে তার সুবিধা হবে।
৫৮ বছর বয়সী আনুতিন ২০২৩ সালে ফেউ থাই নেতৃত্বাধীন জোট সরকারে এবং এর আগে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ওচার সামরিক সমর্থিত সরকারেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
এছাড়াও, আনুতিনকে গাঁজা বৈধ করার পক্ষে জোরালোভাবে সমর্থন করার জন্য বিশেষভাবে পরিচিতি রয়েছে। বর্তমানে এই নীতিটি চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য আরও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। কোভিড-১৯ মহামারীর সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, যদিও ভ্যাকসিন সরবরাহ পর্যাপ্ত না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে সমালোচনাও উঠেছিল।
যদি আনুতিন নির্বাচিত হন, তবে তার দল পিপলস পার্টির সমর্থন আদায়ের জন্য চার মাসের মধ্যে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। পিপলস পার্টির নেতা নাথাফং রুয়েংপানিয়াওয়াত জানিয়েছেন, তারা বিরোধী দল হিসেবেই থাকবে, যা নতুন সরকারকে সংখ্যালঘু সরকারে পরিণত করতে পারে।
পিপলস পার্টি আরও জানিয়েছে, আনুতিন নেতৃত্বাধীন সরকারকে নির্বাচিত গণপরিষদ কর্তৃক নতুন সংবিধান প্রণয়নের জন্য গণভোট আয়োজন করতে হবে। এই দলটি দীর্ঘদিন ধরে সামরিক সরকারের চাপিয়ে দেওয়া সংবিধানের পরিবর্তন চেয়ে আসছে, যাতে এটিকে আরও গণতান্ত্রিক করা যায়।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের নির্বাচনে মুভ ফরওয়ার্ড পার্টি সবচেয়ে বেশি আসন পেলেও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে তাদের প্রার্থীকে অনুমোদন দিতে ব্যর্থ হয় যৌথভাবে পার্লামেন্ট ও সিনেট।
সিনেটররা, যারা সামরিক সরকার কর্তৃক নিযুক্ত এবং থাইল্যান্ডের রাজতন্ত্রপন্থী রক্ষণশীলদের শক্তিশালী সমর্থক ছিলেন, রাজতন্ত্রে সংস্কারের নীতির বিরোধিতা করায় প্রগতিশীল দলটির বিরুদ্ধে ভোট দেন।
বর্তমানে সিনেটের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অধিকার নেই।
মুভ ফরওয়ার্ডকে সরকার গঠনে বাধা দেওয়ার পর, ফেউ থাই তাদের প্রার্থী, রিয়েল এস্টেট নির্বাহী স্রেথা থাভিসিনকে জোট সরকারের প্রধান হিসেবে অনুমোদন দেয়। কিন্তু নৈতিক বিধি লঙ্ঘনের কারণে সাংবিধানিক আদালত তাকেও এক বছরের মধ্যে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়।
স্রেথার স্থলাভিষিক্ত পেটংতার্ন, যিনি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী থাকসিন শিনাওয়াত্রার কন্যা, তিনিও এক বছরও টিকতে পারেননি। এমনকি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে, আনুতিনের ভূমিজাইথাই পার্টি জুন মাসে কম্বোডিয়ার হুন সেনের সঙ্গে বিতর্কিত আলোচনার পরই জোট ত্যাগ করে। ফলে ফেউ থাইয়ের জোট দুর্বল হয়ে পরে এবং পার্লামেন্টে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা কমে যায়।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস