থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হলো রাজকীয় হালচাষ অনুষ্ঠান, কৃষকদের জন্য ভালো ফলনের পূর্বাভাস।
প্রতি বছর, থাইল্যান্ডে জাঁকজমকপূর্ণ এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বর্ষার শুরু এবং কৃষিকাজের সূচনা করা হয়। এই অনুষ্ঠানটি ‘রয়্যাল প্লাউয়িং সেরেমনি’ বা রাজকীয় হালচাষ অনুষ্ঠান নামে পরিচিত।
সম্প্রতি, ব্যাংককের সানাম লুয়াংয়ে এই ঐতিহ্যপূর্ণ অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে দেশটির রাজা মহা ভাজিরালংকর্ন ও রানি সুথিদাকে দেখা যায়।
এই অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য হলো, আগামী বছরের কৃষিকাজের পরিস্থিতি কেমন যাবে, তার পূর্বাভাস দেওয়া।
থাই ইতিহাস অনুযায়ী, এই ঐতিহ্য প্রায় ৭০০ বছর ধরে চলে আসছে। অতীতে যেমন, এখনো তেমনি, দেশটির সংস্কৃতি ও অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু হলো ধান চাষ।
তাই, এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কৃষকদের উৎসাহ যোগানো হয়, যখন তারা নতুন করে চাষাবাদ শুরু করেন।
অনুষ্ঠানে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ পদাধিকারী ব্যক্তি ‘লর্ড অফ দ্য প্লাউয়িং সেরেমনি’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সজ্জিত হয়ে বিভিন্ন ধরনের কাপড়ের মধ্যে থেকে একটি নির্বাচন করেন।
এই কাপড়টি নির্বাচন করার মাধ্যমে ধারণা করা হয় যে, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হবে এবং শস্য উৎপাদন ভালো হবে।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্যায়ে, পবিত্র দুটি ষাঁড়ের (যাদের নাম ‘পর’ এবং ‘পিয়াং’, যার অর্থ ‘পর্যাপ্ততা’) মাথায় মন্ত্র পাঠ করে তাদের হলকর্ষণ করার জন্য প্রস্তুত করা হয়।
এরপর তারা একটি নির্দিষ্ট স্থানে লাঙল দিয়ে কয়েকবার জমি চাষ করে এবং শস্য বীজ বপন করে।
এসময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলে ঐতিহ্যপূর্ণ পোশাকে সজ্জিত হয়ে এই কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হন।
এরপর ষাঁড় দুটিকে খাদ্য নির্বাচনের জন্য ব্রাক্ষ্মণ পুরোহিতদের দেওয়া বিভিন্ন খাবার থেকে বেছে নিতে দেখা যায়।
তারা জল, ঘাস এবং মদ জাতীয় পানীয় পছন্দ করে।
এই নির্বাচনের মাধ্যমে যথাক্রমে পর্যাপ্ত জল সরবরাহ, খাদ্যশস্যের প্রাচুর্য এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ভালো সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
অনুষ্ঠান শেষে, রাজা ও রানীর প্রস্থানের পর উপস্থিত দর্শনার্থীরা বীজ সংগ্রহ করার জন্য মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
তারা এটিকে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে দেখেন এবং নিজেদের বাড়ির ধানের সঙ্গে মিশিয়ে দেন।
প্রতি বছর এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে থাইল্যান্ডের কৃষকরা তাদের আগামী দিনের ভালো ফলনের স্বপ্ন দেখেন।
বাংলাদেশের কৃষকদের কাছেও এই ধরনের অনুষ্ঠানগুলির গুরুত্ব অনেক।
কারণ, আমাদের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে কৃষিকাজ ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস