যুক্তরাজ্যের বৃহত্তম জল সরবরাহকারী সংস্থা, থেমস ওয়াটারকে (Thames Water) নর্দমার দূষিত জল নদীতে ফেলার অভিযোগে বিশাল অঙ্কের জরিমানা করা হয়েছে। একইসঙ্গে, শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ (dividend) প্রদানের কারণে কোম্পানিটিকে ১৩ হাজার কোটি টাকার বেশি জরিমানা করেছে দেশটির নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
বুধবার (গতকালের সংবাদ অনুসারে) ওয়াটার রেগুলেটর অফওয়াট (Ofwat) এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে।
সংস্থাটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা পরিবেশ সুরক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে এবং সেই সঙ্গে লভ্যাংশ বিতরণেও তারা নিয়ম ভেঙেছে। অফওয়াট এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পরিবেশ রক্ষার জন্য ১০ কোটি ৪৪ লক্ষ পাউন্ড এবং লভ্যাংশ সংক্রান্ত নিয়ম ভঙ্গের জন্য ১ কোটি ৮২ লক্ষ পাউন্ড জরিমানা করা হয়েছে।
ব্রিটেনের জল খাতে এটাই সর্বকালের সর্বোচ্চ জরিমানা।
লন্ডন এবং আশেপাশের ১ কোটি ৬০ লক্ষ মানুষের কাছে জল সরবরাহ করে থাকে থেমস ওয়াটার। অফওয়াট এর মতে, এই সংস্থাটি তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে।
উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি, রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচালনার ক্ষেত্রে তাদের দুর্বলতা ছিল। একইসঙ্গে, তারা অনুচিতভাবে লভ্যাংশ প্রদান করেছে।
ব্রিটিশ সরকার স্পষ্ট করে জানিয়েছে, এই জরিমানা গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করা হবে না, বরং তা কোম্পানি এবং তাদের বিনিয়োগকারীদের বহন করতে হবে।
বর্তমানে, থেমস ওয়াটার নর্দমার দূষিত জল নদী ও জলাশয়ে ফেলার অভিযোগে সমালোচনার শিকার হচ্ছে। এমন এক সময়ে যখন জল সরবরাহকারী সংস্থাগুলো পুরনো অবকাঠামো আধুনিকীকরণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাহিদা মেটাতে বিল বাড়াচ্ছে, তখন তাদের এই ধরনের কাজের জন্য তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
প্রায় ১৯ বিলিয়ন পাউন্ড ঋণের বোঝা নিয়ে জর্জরিত এই কোম্পানি দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। মার্চ মাসে জরুরি ভিত্তিতে সরকারের কাছ থেকে তারা প্রায় ৩০০ কোটি পাউন্ডের আর্থিক সহায়তা পাওয়ার জন্য আদালতের অনুমোদন লাভ করে।
বর্তমানে, তারা একটি মার্কিন বিনিয়োগ সংস্থা, কে.কে.আর (KKR)-এর কাছে নিজেদের বিক্রি করার চেষ্টা করছে।
ভোক্তা এবং রাজনীতিবিদরা থেমস ওয়াটারের কঠোর সমালোচনা করেছেন। তাদের অভিযোগ, কোম্পানিটি পাইপলাইন, পাম্প এবং জলাধারগুলিতে বিনিয়োগ না করে শেয়ারহোল্ডারদের অতিরিক্ত লভ্যাংশ দিয়েছে এবং কর্মকর্তাদের উচ্চ বেতন দিয়েছে।
যদিও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বলছে, নিয়ন্ত্রকদের ভুলের কারণে এমনটা হয়েছে, কারণ তারা দীর্ঘদিন ধরে বিল কম রেখেছিল, যা তাদের উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান দিতে পারেনি।
থেমস ওয়াটার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা পরিবেশের প্রতি তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন এবং অফওয়াট-এর তদন্তে উত্থাপিত বিষয়গুলো সমাধানে তারা ইতিমধ্যে অগ্রগতি করেছে।
কোম্পানি আরও জানায়, তারা আইনি এবং নিয়ন্ত্রক বাধ্যবাধকতা বিবেচনা করেই লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। তাদের ঋণদাতারা তাদের তারল্য পরিস্থিতিকে সমর্থন করে এবং ইক্যুইটি সংগ্রহের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশেও নদী দূষণ এবং পরিবেশ সুরক্ষার মতো সমস্যাগুলো বিদ্যমান। তাই, এই ধরনের ঘটনা আমাদের দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস