যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন আর্চবিশপ থিওডোর ম্যাককারিকের জীবনাবসান হয়েছে, যিনি ছিলেন এক সময়ের প্রভাবশালী ধর্মগুরু। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যায়, তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর।
তিনি ওয়াশিংটনের আর্চবিশপ পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেছিলেন।
ম্যাককারিক এক সময় ক্যাথলিক চার্চের প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন। পোপের বিরাগভাজন হওয়ার আগে তিনি কার্ডিনাল হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে গুরুতর কিছু অভিযোগ ওঠার পরেই পরিস্থিতি পাল্টে যায়।
তাঁর বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ছিল, যার ভিত্তিতে তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ ছিল, তিনি এক কিশোরকে যৌন নির্যাতন করেছেন। এই ঘটনার তদন্তের পর তাকে পুরোহিত পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
ক্যাথলিক চার্চের ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল। ভ্যাটিকান থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, পোপের নির্দেশে কোনো কার্ডিনালকে পদচ্যুত করার ঘটনা এটাই প্রথম। এই ঘটনায় অনেকেই হতবাক হয়েছেন।
ম্যাককারিকের কর্মজীবন ছিল দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য। তিনি পোপ দ্বিতীয় জন পলের মানবাধিকার বিষয়ক দূত হিসেবে বিভিন্ন সময় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। এই সূত্রে তিনি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গেও কাজ করেছেন।
কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিডেল কাস্ত্রোর সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক ছিল। ২০০০ সালে তিনি ওয়াশিংটনের আর্চবিশপ হন এবং এরপর তিনি তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও জর্জ ডব্লিউ বুশের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।
তবে ২০১৮ সালে তাঁর বিরুদ্ধে পুরোনো কিছু অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে। এর মধ্যে ছিল কয়েক দশক আগের একটি কিশোরকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ। এছাড়াও, আরও কয়েকজন নাবালক ও যুবকের প্রতি যৌন নিপীড়নের অভিযোগও ওঠে।
২০১৯ সালে পোপ ফ্রান্সিস এই বিষয়টি আমলে নিয়ে ম্যাককারিককে যাজক পদ থেকে সরিয়ে দেন। এমনকি জনসাধারণের সামনে ধর্মীয় আচার পালনের অধিকারও তাঁর কেড়ে নেওয়া হয়।
এই ঘটনার পর অনেকে তাঁদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নিপীড়িতদের অধিকার নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠন ম্যাককারিককে ‘ক্যাথলিক চার্চের আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত ও ক্ষমতাধর নির্যাতনকারীদের একজন’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
তাঁরা মনে করেন, ম্যাককারিকের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তাঁর জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটলেও, তাঁর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য এখনো পর্যন্ত কোনো ন্যায়বিচার হয়নি।
তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম।