আতঙ্কে বিশ্ব! ৫-১০ বছরেই কি শুরু হবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ?

বিশ্বজুড়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে আশঙ্কা বাড়ছে, জনমত সমীক্ষায় এমনটাই উঠে এসেছে। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিম ইউরোপের অনেক মানুষ মনে করেন আগামী পাঁচ থেকে দশ বছরের মধ্যে আরেকটি বিশ্বযুদ্ধ শুরু হতে পারে।

এই উদ্বেগের প্রধান কারণ হিসেবে রাশিয়াকে দায়ী করছেন তারা।

ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিজয় দিবস পালনের প্রাক্কালে, আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ইউগভ’-এর করা জনমত সমীক্ষায় এই চিত্র উঠে এসেছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে একটি বড় অংশ মনে করেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ঘটনাগুলো আজও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং তরুণ প্রজন্মের কাছে এ সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া জরুরি।

সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও স্পেনের নাগরিকদের মধ্যে ৪১ থেকে ৫৫ শতাংশ মনে করেন, আগামী পাঁচ থেকে দশ বছরের মধ্যে আরেকটি বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা রয়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫ শতাংশ মানুষও একই মত পোষণ করেন।

এই সম্ভাব্য যুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন অধিকাংশ মানুষ। জরিপে অংশ নেওয়াদের মধ্যে ৬৮ থেকে ৭৬ শতাংশ উত্তরদাতা এমনটা জানিয়েছেন। এছাড়া, ৫৯ থেকে ৭৩ শতাংশ মনে করেন, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলে ১৯৩৯-৪৫ সালের চেয়ে অনেক বেশি জীবনহানি ঘটবে। এমনকি, অনেকের ধারণা, এতে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ মারা যেতে পারে।

অধিকাংশ মানুষই, যাদের মধ্যে ইতালির ৬৬ শতাংশ থেকে শুরু করে যুক্তরাজ্যের ৮৯ শতাংশ পর্যন্ত রয়েছেন, মনে করেন, এমন কোনো যুদ্ধে তাদের দেশও জড়িত হবে। তবে, তাদের সশস্ত্র বাহিনী তাদের রক্ষা করতে পারবে কিনা, সে বিষয়ে অনেকের সন্দেহ রয়েছে।

ইতালির মাত্র ১৬ শতাংশ এবং ফ্রান্সের ৪৪ শতাংশ মনে করে তাদের দেশের সামরিক বাহিনী তাদের রক্ষা করতে সক্ষম হবে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ৭১ শতাংশ নাগরিক তাদের সেনাবাহিনীর ওপর আস্থা রাখেন।

পশ্চিম ইউরোপের ৭২ থেকে ৮২ শতাংশ এবং আমেরিকার ৬৯ শতাংশ মানুষ মনে করেন, রাশিয়া আরেকটি বিশ্বযুদ্ধের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী হবে। এরপর তারা ইসলামিক সন্ত্রাসবাদের কথা উল্লেখ করেছেন।

তবে, অনেক ইউরোপীয় মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনাও মহাদেশীয় শান্তির জন্য হুমকি স্বরূপ। স্পেনের ৫৮ শতাংশ, জার্মানির ৫৫ শতাংশ এবং ফ্রান্সের ৫৩ শতাংশ মনে করে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক ইউরোপের শান্তির জন্য একটি বড় ধরনের হুমকি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে, ফ্রান্সের ৭২ শতাংশ, জার্মানির ৭০ শতাংশ এবং যুক্তরাজ্যের ৬৬ শতাংশ মানুষ জানান, তারা এই বিষয়ে ভালো ধারণা রাখেন। তবে, এই যুদ্ধে সরাসরি অংশ না নেওয়া স্পেনের মাত্র ৪০ শতাংশ মানুষ এই বিষয়ে অবগত।

ফ্রান্সের ৭৭ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, তারা স্কুলে এই যুদ্ধ সম্পর্কে ভালোভাবে জেনেছেন। জার্মানিতে এই সংখ্যা ৬০ শতাংশ, ব্রিটেনে ৪৮ শতাংশ এবং স্পেনে ৩৪ শতাংশ।

তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এই বিষয়ে জানার আগ্রহ তুলনামূলকভাবে বেশি দেখা গেছে।

পশ্চিম ইউরোপ এবং আমেরিকার ৮২ থেকে ৯০ শতাংশ মানুষ মনে করেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে বিদ্যালয়ে পড়ানো উচিত। তাদের মধ্যে ৭২ থেকে ৮৭ শতাংশ মনে করেন, যুদ্ধের ঘটনাবলী এবং এর কারণগুলো আজও প্রাসঙ্গিক।

এই সময়ে দাঁড়িয়ে, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৩১ শতাংশ (স্পেন) থেকে ৫২ শতাংশ (যুক্তরাষ্ট্র) পর্যন্ত মনে করেন, তাদের নিজ দেশেও ১৯৩০ ও ১৯৪০ এর দশকে জার্মানির নাৎসিদের মতো অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

অন্যদিকে, ৪৪ থেকে ৫৯ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, অন্য কোনো পশ্চিম ইউরোপীয় দেশে নাৎসিদের মতো অপরাধ সংঘটিত হতে পারে। আর যুক্তরাষ্ট্রেও এমন ঘটনার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন ৪৪ থেকে ৬০ শতাংশ মানুষ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসিদের পরাজিত করতে কারা সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে জানতে চাইলে, জরিপে অংশ নেওয়া পাঁচটি দেশের ৪০ থেকে ৫২ শতাংশ মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের নাম উল্লেখ করেছেন। এছাড়া, সোভিয়েত ইউনিয়নের কথা বলেছেন ১৭ থেকে ২৮ শতাংশ মানুষ।

তবে, যুক্তরাজ্যের ৪১ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, ব্রিটেনই এক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে।

যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জার্মানির কার্যক্রম নিয়ে জানতে চাওয়া হলে, প্রায় ৪৬ শতাংশ জার্মান মনে করেন, তারা তাদের যুদ্ধকালীন কার্যক্রমের সঠিক মূল্যায়ন করতে পেরেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৯ শতাংশ এবং ব্রিটেনের ৫৮ শতাংশ মানুষও একই মত পোষণ করেন।

তবে, ফ্রান্সের ৩৪ শতাংশ এবং ইতালির ৩০ শতাংশ মানুষ এ বিষয়ে নিশ্চিত নন।

অন্যদিকে, প্রায় ৪৭ শতাংশ জার্মান মনে করেন, তাদের দেশ নাৎসি অতীত নিয়ে অতিরিক্ত সচেতন ছিল, যার কারণে তারা সাম্প্রতিক সমস্যাগুলো মোকাবিলায় ততটা সক্রিয় হতে পারেনি। মাত্র ২৪ শতাংশ মনে করেন, তাদের নেতারা এই ক্ষেত্রে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখতে পেরেছেন।

যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর শান্তি রক্ষায় কারা সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে জানতে চাইলে, ছয়টি দেশের ৫২ থেকে ৬৬ শতাংশ মানুষ ন্যাটোর কথা উল্লেখ করেছেন। এছাড়া, জাতিসংঘকে একটি বড় ভূমিকা পালনকারী হিসেবে মনে করেন ৪৪ থেকে ৬০ শতাংশ মানুষ।

পাশাপাশি, ইউরোপে শান্তি বজায় রাখার উদ্দেশ্যে গঠিত ইইউ’কে (ইউরোপীয় ইউনিয়ন) একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে মনে করেন ৪৫ থেকে ৫৬ শতাংশ মানুষ।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *