খ্যাতিমান অভিনেতা টিম রথ তাঁর ছেলের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে অকাল মৃত্যুর পর শোকের সঙ্গে কিভাবে লড়াই করছেন, সেই বিষয়ে মুখ খুলেছেন। সম্প্রতি, তিনি তাঁর নতুন ছবি ‘পয়জন’ নিয়ে কথা বলেছেন, যেখানে বিচ্ছেদ-ক্লিষ্ট এক দম্পতির গল্প বলা হয়েছে, যারা তাঁদের ছেলের মৃত্যুর দশ বছর পর আবার মিলিত হন।
৬৪ বছর বয়সী এই অভিনেতা ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর সঙ্গে আলাপকালে জানান, ছবিটির শুটিং শেষ হওয়ার কয়েক মাস পরেই তাঁর ২৫ বছর বয়সী ছেলে করম্যাক ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ছবিতে টিম রথ লুকাস চরিত্রে অভিনয় করেছেন, আর তাঁর বিপরীতে ছিলেন অভিনেত্রী ট্রাইন ডিরহোলম।
টিন জানান, “আসলে, ছবিটা এমন একটা বিষয় নিয়ে তৈরি হয়েছে, যা আমাদের পরিবারের জন্য এখন খুবই মর্মস্পর্শী। শোক প্রকাশের কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। সবাই আলাদাভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়—প্রত্যেকেই—নাহলে তো এর কোনো প্রতিকার থাকত।”
ছবিতে দেখা যায়, ওই দম্পতির ছেলেকে কবর থেকে তুলতে হচ্ছে, কারণ সমাধিস্থলে বিষাক্ত পদার্থ মিশে যাচ্ছে। ছবিটির অধিকাংশ দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে লুক্সেমবার্গের একটি বাস্তব কবরস্থানে। চরিত্রগুলো, পুনর্মিলনের আগে, শোকের কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল।
লস অ্যাঞ্জেলেসে বসবাসকারী টিম রথ স্বীকার করেছেন যে তিনি প্রথমে ছবিটি থেকে সরে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর ছেলে করম্যাক তাঁকে ছবিটা চালিয়ে যাওয়ার জন্য জোর করেন। তিনি বলেছিলেন, “ছেলে আমাকে এটা করতে নিরুৎসাহিত করেনি। বরং, সে মনে করত, এটা ভালো একটা কাজ। হয়তো চাইছিল, আমি যেন বাড়ির বাইরে যাই।”
“ছেলে অনুমোদন দিয়েছিল বলেই আমি ছবিটা করেছি। যদি তার আমাকে কাছে থাকার প্রয়োজন হতো, তাহলে আমি অবশ্যই থাকতাম,” তিনি যোগ করেন। “তখন আমরা ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করছিলাম, কারণ সে তখনও আমাদের সঙ্গে ছিল।”
ছবিতে শোকের চিত্রায়ণ নিয়ে টিম বলেন, “ছবিটাতে একটা গভীর সত্যতা আছে, কারণ এটা দেখায় যে শোক প্রকাশের ধরনও মানুষের আঙুলের ছাপের মতোই আলাদা। এখন বন্ধু এবং পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আমি দেখি, সবাই ভিন্নভাবে এই শোকের মোকাবিলা করছে এবং তাদের এই অনুভূতির প্রতি সম্মান জানানো উচিত।”
২০২২ সালের ১৬ই অক্টোবর, রথ পরিবার জানায়, “আমরা আমাদের প্রিয় ছেলে করম্যাককে ক্যান্সারের সঙ্গে এক সাহসী লড়াইয়ের পর হারিয়েছি।” করম্যাক ২০২১ সালের নভেম্বরে স্টেজ থ্রি জার্ম সেল ক্যান্সার ধরা পড়ার বিষয়টি জুলাই ২০২২-এ নিজের ইনস্টাগ্রাম পোস্টে জানিয়েছিলেন।
পরিবারটি জানায়, “সে তার পরিবারের ভালোবাসাপূর্ণ আশ্রয়ে শান্তিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে। সে গত এক বছর ধরে অসীম সাহস নিয়ে লড়াই করেছে এবং শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তার তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ও হাস্যরস বজায় রেখেছিল।”
করম্যাককে বর্ণনা করতে গিয়ে পরিবারটি বলেছে, “সে ছিল এক বন্য এবং বিদ্যুচ্চমকিত প্রাণশক্তি, যার আত্মা আলো এবং ভালোত্বে পরিপূর্ণ ছিল।”
“করম্যাক, বন্য হলেও, দয়া ও ভালোবাসার প্রতিমূর্তি ছিল। সে ছিল এক শান্ত স্বভাবের মানুষ, যে তার চারপাশের মানুষের জন্য অনেক আনন্দ এবং আশা নিয়ে এসেছিল। সেই সুন্দর ছেলেটির কথা যখন আমরা ভাবি, তখন শোকের ঢেউ আসে, কান্না আসে, আবার হাসিও পায়—২৫ বছর ১০ মাস ধরে আমরা তাকে যেভাবে জেনেছি।”
পরিবারটি আরও জানায়, “সে ছিল এক উচ্ছল, আনন্দময় এবং অসাধারণ এক শিশু। সম্প্রতি সে মানুষ হয়েছিল।”
“আমরা তাকে ভালোবাসি। আমরা তাকে সঙ্গে নিয়ে যাব, যেখানেই যাই,” তাঁরা বলেন। করম্যাক ভার্মন্টের বেনিংটন কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন এবং তিনি ছিলেন একজন অসাধারণ সঙ্গীতজ্ঞ, সঙ্গীতের প্রতি তাঁর আবেগ ও ভালোবাসা ছিল, যা তাঁর গিটারটির থেকেও বড় ছিল।
করম্যাক তাঁর শেষ ইনস্টাগ্রাম পোস্টটি করেন আগস্ট ২০২২-এ। তিনি তাঁর অনুসারীদের জীবনকে উপভোগ করার আহ্বান জানান এবং তাঁদের অব্যাহত সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানান।
“আপনারা সবসময় আপনাদের ভাগ্য বেছে নিতে পারেন না, সবসময় ভবিষ্যৎও বেছে নিতে পারেন না। কিন্তু এমন একটি অদম্য শক্তি হোন, যা বাঁচে এবং শ্বাস নেয়,” তিনি ভিডিও পোস্টে বলেছিলেন। “যে জিনিসটাকে আপনারা ভালোবাসেন এবং যা আপনারা, সেটা সত্যিই করুন। যদি এটা আপনাকে খুশি করে, তাহলে সত্যিই সেটা করুন।”
‘পয়জন’ ছবিটির মুক্তির তারিখ এখনো ঘোষণা করা হয়নি।
তথ্য সূত্র: পিপল