ক্ষমতাকে প্রশ্ন করতে চান টাইম ম্যাগাজিনের পরিচালক!

সময়-এর প্রচ্ছদ: কর্তৃপক্ষের প্রতি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিতে চান ২৬ বছরের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর।

দৃষ্টি আকর্ষক ছবি আর তার পেছনের গল্প নিয়ে কাজ করা একজন মানুষের কথা বলছি। তিনি হলেন ডি.ডব্লিউ. পাইন, যিনি দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন ‘টাইম’-এর ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টরের দায়িত্ব পালন করছেন।

সম্প্রতি তিনি ম্যাগাজিনের এক হাজারতম প্রচ্ছদ তৈরি করেছেন। ছবি আর লেখার মাধ্যমে কর্তৃপক্ষের প্রতি প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়াটাই যেন তার কাজ।

পাইন ১৯৯৮ সাল থেকে এই পদে আছেন। তার হাত ধরেই ‘টাইম’-এর পাতায় স্থান পেয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস থেকে শুরু করে স্টিভ জবস, ভ্লাদিমির পুতিন কিংবা কিম জং-উনের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।

শুধু তাই নয়, একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে আলোচিত কিছু প্রচ্ছদের নেপথ্যেও ছিলেন তিনি।

পাইন-এর তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত কিছু প্রচ্ছদ বেশ বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ২০১২ সালের ২১ মে প্রকাশিত ‘আর ইউ মম এনাফ?’ প্রচ্ছদটি।

যেখানে দেখা যায়, একজন মা তার তিন বছর বয়সী শিশুকে স্তন্যপান করাচ্ছেন। এছাড়া, ২০১৭ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি থেকে ৬ই মার্চের মধ্যে প্রকাশিত ‘নথিং টু সি হিয়ার’ প্রচ্ছদটিও বেশ আলোচনার জন্ম দেয়।

যেখানে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি ঝড়ের মধ্যে দেখা যায়। একইভাবে, ২০১০ সালের ৯ই আগস্ট প্রকাশিত ‘আইশা’ প্রচ্ছদটিও মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, যেখানে একজন আফগান নারীর ছবি ছিল, যার নাক তালেবানরা কেটে দিয়েছিল।

তবে পাইন মনে করেন, সব প্রচ্ছদ বিতর্ক তৈরির উদ্দেশ্যে করা হয় না। তার মতে, ‘টাইম’-এর সাফল্যের মূল কারণ হলো, তারা সব সময় প্রভাবশালী নেতাদের ওপর নির্ভর করে না।

অনেক সময় তারা এমন সব সিইও এবং সেলিব্রিটিদের নিয়ে কাজ করে, যাদের হয়তো সরাসরি বিতর্কিত মনে হয় না, কিন্তু তারা গুরুত্বপূর্ণ।

পাইন বলেন, “কোন বিষয়টির ওপর জোর দিতে হবে, তা জানাটাই সাফল্যের চাবিকাঠি।”

টাইম-এর বিতর্কিত প্রচ্ছদগুলো কীভাবে বিভিন্ন এবং কখনো পরস্পরবিরোধী বার্তা দেয়, সে বিষয়েও কথা বলেন তিনি। যেখানে অসংখ্য বিশ্লেষণধর্মী লেখা রয়েছে, সেখানে একটি ছবি অনেক বেশি শক্তিশালী হতে পারে।

পাইন মনে করেন, ম্যাগাজিনের লাল বর্ডারের মধ্যে একটি ছবি স্থান পেলে, তা মানুষের মনে গভীর প্রভাব ফেলে।

প্রচ্ছদে খুব বেশি লেখা ব্যবহার করতে চান না পাইন। ছবিগুলোকেই তিনি তাদের কথা বলতে দেন।

উদাহরণস্বরূপ, ‘নথিং টু সি হিয়ার’ প্রচ্ছদটির কথা বলা যায়। পাইন বলেন, এটি একইসঙ্গে দুটি বার্তা দেয়: ট্রাম্প সমর্থকদের কাছে এটি সাহসিকতার প্রতীক, আবার যারা ট্রাম্পের বিরোধী, তাদের কাছে এটি ওভাল অফিসে ট্রাম্পের শাসনের বিশৃঙ্খলাকে তুলে ধরে।

অন্যদিকে, ফেব্রুয়ারির প্রচ্ছদে ইলন মাস্ককে দেখা যায়, যেখানে প্রতীকী উপস্থাপনার ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল। পাইন বলেন, “যে টেবিলে বসে সবাই কাজ করেন, সেই টেবিলে মাস্ককে বসানোই যথেষ্ট ছিল।”

পাইন আরও জানান, “মাস্ক অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণ করছিলেন, তাই আমরা তাকে সেই আসনে বসিয়েছি। আমি চেয়েছিলাম তার হাতে এক কাপ কফি থাকুক। কারণ তিনি যখন ডগecoin নিয়ে কাজ করছিলেন, তখন তিনি স্বাভাবিকভাবে কফি খাচ্ছিলেন, যা ছিল খুবই সাধারণ।”

ট্রাম্প প্রশাসনের সময় ‘টাইম’-এর কাজ কেমন ছিল, সেই বিষয়েও কথা বলেন পাইন। তিনি বলেন, ট্রাম্পের সময়ে প্রতিটি মুহূর্তই গুরুত্বপূর্ণ ছিল, যা পাঠকদের জানানো দরকার ছিল। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন।

পাইন বলেন, “আমরা প্রেসিডেন্টকে নিয়ে কাজ চালিয়ে যাব। কিছু প্রচ্ছদ হয়তো বিতর্কিত হবে। তবে আগের মতো একই জিনিস বারবার করার আর প্রয়োজন নেই।”

ইতিমধ্যেই পাইনের করা একটি প্রচ্ছদ নিয়ে প্রেসিডেন্টের সমালোচনার শিকার হতে হয়েছে। মাস্ককে ট্রাম্পের ডেস্কে বসানোর পর ট্রাম্প ম্যাগাজিনটিকে প্রশ্ন করেন, ‘টাইম ম্যাগাজিন কি এখনো ব্যবসা করছে?’

পাইন বলেন, ট্রাম্পের এই ধরনের কথাকে হালকাভাবে নিতে হবে। কারণ, সমালোচনার জবাবে হাসাহাসি করার একটা প্রবণতা তার মধ্যে রয়েছে।

পাইন আরও যোগ করেন, ট্রাম্প ‘টাইম’-এর প্রচ্ছদে আসতে পছন্দ করেন।

পাইন বলেন, “প্রচ্ছদে আসতে পারলে তিনি সম্মানিত হন, তবে তিনি এর মাত্র ২০ শতাংশ পছন্দ করেন।”

ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের এখনো প্রায় চার বছর বাকি। তাই পাইন মনে করেন, ভবিষ্যতে ট্রাম্পকে নিয়ে আরও প্রচ্ছদ তৈরি করা হবে এবং সম্ভবত তিনি রিচার্ড নিক্সনের চেয়েও বেশিবার ‘টাইম’-এর প্রচ্ছদে আসবেন।

পাইন জোর দিয়ে বলেন, “আমরা কর্তৃপক্ষের প্রতি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিতে চাই। যদি আমাদের নিয়ে কেউ কথা না বলে, তাহলেই সমস্যা।”

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *