কর্মব্যস্ত এই জীবনে সময় যেনো ফুরিয়ে যায়! সময় ব্যবস্থাপনার উপায় কী?
আমাদের চারপাশে যেনো সময়ের অভাব। কাজ, সংসার, ব্যক্তিগত জীবন – সব সামলাতে গিয়ে অনেকেরই দম ফেলার ফুরসত থাকে না। ঘড়ির কাঁটা দ্রুত ঘোরে, আর আমরা যেনো ছুটতেই থাকি।
সম্প্রতি, সময় ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করা যাক।
ইদানীং, অনেকেরই একটা সাধারণ সমস্যা হলো সময়ের সঠিক ব্যবহার করতে না পারা। হয়তো কোনো কাজ শুরু করার সময় আমরা এর জন্য বেশি সময় বরাদ্দ করি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা যায় হাতে সময় কম।
এমন পরিস্থিতিতে মানসিক চাপ বাড়ে, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে আরও কঠিন করে তোলে।
বিশেষজ্ঞরা একে ‘ঘটনা-সময়’ (event time) হিসেবে চিহ্নিত করেন। এই ধারণায়, একজন ব্যক্তি ভেতরের অনুভূতির দ্বারা সময়কে অনুভব করেন।
এর বিপরীতে, ‘ঘড়ি-সময়’ (clock time) হলো সময়কে বাইরের হিসাব অনুযায়ী, যেমন – দিনের নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খাওয়া বা অফিসের কাজ করা।
কিন্তু কিভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়? কিভাবে সময়কে আরও ভালোভাবে কাজে লাগানো যায়?
সম্প্রতি প্রকাশিত ‘টাইম হ্যাকস: দ্য সাইকোলজি অফ টাইম অ্যান্ড হাউ টু স্পেন্ড ইট’ (Time Hacks: The Psychology of Time and How to Spend It) বইয়ে, লেখক ইয়ান টেইলর সময় ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো তুলে ধরেছেন। তাঁর মতে, সময়ের সঠিক ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন নিজের মূল্যবোধ ও ভালো থাকার দিকে নজর রাখা।
টেইলরের মতে, সময়ের সঠিক ব্যবহারের মূল চাবিকাঠি হলো আপনার জীবনযাত্রার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সময় কাটানো। যখন আপনি অনুভব করবেন আপনার সময় ভালোভাবে কাটছে, তখন কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়ে। এর ফলে, আপনি আরও ভালোভাবে কাজ করতে পারবেন।
তবে, সবসময় ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় কাটানো উচিত নয়। সময়কে অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে অনেক সময় তা ফলপ্রসূ হয় না।
তাহলে, কিভাবে সময়কে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনা যায়?
- সময় চিহ্নিত করুন: প্রথমে, আপনার সময় কোথায় ব্যয় হচ্ছে, তা চিহ্নিত করা প্রয়োজন। একটি স্প্রেডশিটে, ১৫ মিনিটের ব্যবধানে আপনার কার্যকলাপ রেকর্ড করতে পারেন। এতে আপনি বুঝতে পারবেন, কোন সময়ে আপনি বেশি কাজ করছেন, আর কোন সময়ে আপনার মনোযোগ কমে যাচ্ছে।
- অপ্রয়োজনীয় কাজ পরিহার করুন: ই-মেইল (e-mail) আমাদের অনেক মূল্যবান সময় কেড়ে নেয়। তাই, চেষ্টা করুন ই-মেইলের ব্যবহার কমিয়ে, গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোতে বেশি মনোযোগ দিতে।
- দিনের সেরা সময় ব্যবহার করুন: দিনের যে সময়ে আপনি সবচেয়ে বেশি কর্মক্ষম থাকেন, সেই সময়ে কঠিন কাজগুলো করার চেষ্টা করুন। সাধারণত, সকালের দিকে মানুষের মনোযোগ বেশি থাকে, তাই গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সকালে করাই ভালো।
- নিজের জন্য সময় রাখুন: কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নেয়া প্রয়োজন। বিশ্রাম আপনার মনকে সতেজ করে এবং কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়ায়।
- নিজের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে চলুন: নিজের মূল্যবোধ ও জীবনযাত্রার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সময় কাটানোর চেষ্টা করুন। আপনি যদি বই পড়তে ভালোবাসেন, তবে বই পড়ার জন্য সময় বের করুন।
সবশেষে, মনে রাখতে হবে, সময় সবার জন্য সীমিত। তাই, সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করে জীবনকে আরও সুন্দর ও উপভোগ্য করে তোলা আমাদের সকলের দায়িত্ব।
তথ্য সূত্র: The Guardian