**টিনা নোলস: জীবন, সংগ্রাম ও সাফল্যের গল্প**
বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় শিল্পী বেয়ন্সের মা টিনা নোলস, সম্প্রতি প্রকাশিত তাঁর আত্মজীবনী ‘ম্যাট্রিয়ার্ক’ নিয়ে মুখ খুলেছেন। এই বই এবং তাঁর জীবনযাত্রা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
একটি সাক্ষাৎকারে তিনি তাঁর জীবনের নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন, যা অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা জোগাবে।
টিনা নোলস-এর জন্ম টেক্সাসের এক দরিদ্র পরিবারে। তাঁর শৈশব কেটেছে বর্ণবৈষম্যের মধ্যে। তাঁর ভাষায়, সেই সময়টা আজকের দিনের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ছিল।
তাঁর মেয়ে, বেয়ন্সে এবং সোলাঞ্জ, এখন বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেছেন। তাঁদের জীবনযাত্রা বিলাস-বহুল হলেও, সেই সাফল্যের পেছনে রয়েছে কঠোর পরিশ্রম এবং অনেক ত্যাগ।
টিনা নোলস-এর আত্মজীবনী লেখার মূল কারণ ছিল তাঁর নাতি-নাতনীদের কাছে নিজের জীবনের গল্প তুলে ধরা। তিনি চেয়েছিলেন, তাঁদের পূর্বপুরুষদের সংগ্রামের কথা তারা জানুক।
তাঁর কথায়, “আমার পরিবারের সদস্যরা ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে খুব একটা কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। তবে আমি আমার গল্প বলতে চেয়েছি।”
ডেস্টিনি’স চাইল্ড-এর পোশাক ডিজাইন থেকে শুরু করে বেয়ন্সের একক ক্যারিয়ার—সবকিছুতেই মায়ের সমর্থন ছিল।
টিনা নোলস-এর ফ্যাশন এবং ডিজাইন সম্পর্কে গভীর ধারণা রয়েছে। নব্বইয়ের দশকে বেয়ন্সের দল ‘ডেস্টিনি’স চাইল্ড’-এর জন্য পোশাক তৈরি করতে গিয়ে তিনি পুরনো কাপড় এবং সামরিক পোশাকের দোকান থেকে জিনিসপত্র জোগাড় করতেন।
পোশাকের বাজেট কম থাকলেও, তাঁর সৃজনশীলতা ছিল অসাধারণ।
বর্তমানে টিনা একজন সফল ব্যবসায়ী এবং বিভিন্ন পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তাঁর নিয়মিত উপস্থিতি দেখা যায়।
বেয়ন্সের সাফল্যের পেছনে মায়ের অবদান অনস্বীকার্য। তবে, একসময় তিনি অনুভব করেছিলেন, তাঁর কাজের স্বীকৃতি সেভাবে দেওয়া হয়নি।
এখন তিনি তাঁর আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সবকিছু প্রকাশ করতে চান।
বেয়ন্সের প্রথম সন্তান, ব্লু-এর জন্মের সময় অনেকে তাঁর মা হওয়ার সত্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিল। সেই সময়ে টিনা খুব কষ্ট পেয়েছিলেন।
তিনি বলেন, “যখন তারা আপনার সন্তানদের নিয়ে কথা বলে, তখন খারাপ লাগে। আর যখন আপনার নাতি-নাতনীদের নিয়ে কথা হয়, তখন সেটা আরও বেশি কষ্টের।”
তাঁর মেয়েদের গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়ে তিনি সব সময় সচেতন।
তবে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাঝে মাঝে তিনি তাঁদের হয়ে কথা বলেন। তাঁর কথায়, “আমি সবসময় আমার মেয়েদের পাশে আছি। তাদের ভালো-মন্দ সব বিষয়ে আমি তাদের সমর্থন করি।”
এই বইটিতে টিনা তাঁর জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা তুলে ধরেছেন।
এর মধ্যে রয়েছে স্তন ক্যান্সারের সঙ্গে তাঁর লড়াইয়ের গল্প। তিনি চান, অন্য মহিলারাও যেন স্বাস্থ্য পরীক্ষার গুরুত্ব বোঝেন এবং নিজেদের শরীরের প্রতি যত্নবান হন।
টিনার মতে, তাঁর জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান শিক্ষাগুলো তিনি তাঁর মেয়েদের দিয়েছেন।
তিনি সব সময় তাঁদের শিখিয়েছেন, নিজেদের প্রতিযোগী হতে এবং কঠোর পরিশ্রম করতে।
তিনি বলেন, “অন্য মেয়েরা তোমার প্রতিযোগী নয়। তুমি নিজেই নিজের প্রতিযোগী। নিজের উন্নতির জন্য কাজ করো।”
টিনা তাঁর পরিবারের নারী সদস্যদের কাছ থেকে পাওয়া জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেছেন।
তাঁর মা তাঁকে শিখিয়েছিলেন, “সুন্দর মানেই সুন্দর আচরণ করা।”
টিনা নোলস-এর এই আত্মজীবনী শুধু একটি পরিবারের গল্প নয়, বরং এটি সাহস, আত্মবিশ্বাস এবং সাফল্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
এই বই পাঠকদের জীবনে নতুন করে বাঁচার অনুপ্রেরণা জোগাবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান