অর্থনীতিতে অশনি সংকেত? বাড়ছে টিনজাত মাছের বিক্রি!

বাজারে টিনের মাছের চাহিদা বাড়ছে, অর্থনীতির জন্য কি এটা উদ্বেগের সংকেত?

যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে টিনের মাছ (Tinned fish) কেনার হিড়িক লেগেছে। এটা কি নিছকই একটি খাদ্য-ফ্যাশন, নাকি অর্থনীতির দুর্বলতার ইঙ্গিত? সম্প্রতি, অর্থনৈতিক চাপ এবং খাদ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে আমেরিকান ভোক্তারা সাশ্রয়ী মূল্যের খাবারের দিকে ঝুঁকছে।

আর সেই কারণেই টিনের মাছের বিক্রি বাড়ছে, যা একসময় অবহেলিত একটি খাদ্যপণ্য হিসেবে পরিচিত ছিল।

সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন “সি-কুটারি” বোর্ড (seacuterie boards) – যেখানে চারুটারির মতো টিনের মাছ দিয়ে খাবার সাজানো হয়, তার ছবি হরহামেশাই দেখা যায়। কেউ কেউ আবার “টিনড ফিশ পার্টি”র আয়োজন করছেন।

বিভিন্ন রেস্তোরাঁ এবং খাদ্য বিষয়ক ব্লগাররাও এখন তাদের খাদ্য তালিকায় টিনের মাছের পদ যোগ করছেন। স্প্যানিশ ও ইতালীয় উপকূল থেকে আসা বিভিন্ন স্বাদের টুনা, সার্ডিন, এবং অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ এখন ভোক্তাদের পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে।

গুগলে “টিনড ফিশ” লিখে খোঁজা লোকের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে এর চাহিদা ছিল তুঙ্গে। শুধু তাই নয়, বিশেষ কিছু ব্র্যান্ডের টিনের মাছ, যেমন: নুরি’স পর্তুগিজ সার্ডিন (Nuri’s Portuguese sardines) এবং ব্রান্সউইক সার্ডিন (Brunswick sardines) -এর বিক্রিও কয়েকগুণ বেড়েছে।

কিন্তু এই প্রবণতা কি কেবল একটি সাময়িক আগ্রহ, নাকি এর পেছনে গভীর কোনো অর্থনৈতিক কারণ রয়েছে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং মন্দা আসার আশঙ্কায় মানুষ সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী ও সহজে সংরক্ষণযোগ্য খাবারের দিকে ঝুঁকে।

টিনের মাছ যেহেতু সহজে সংরক্ষণ করা যায় এবং তুলনামূলকভাবে সস্তা, তাই অনেকে এখন এই খাবারের দিকে ঝুঁকছেন।

তবে, সবাই একে অর্থনীতির খারাপ সংকেত হিসেবে দেখছেন না। কারো কারো মতে, ভোক্তারা স্বাস্থ্যকর প্রোটিনের বিকল্প হিসেবে এই ধরনের খাবারের দিকে ঝুঁকছে। আবার কেউ বলছেন, মানুষ এখন খাদ্য-বৈচিত্র্যের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রে টিনের মাছের বাজার এখনো তেমন বড় নয়। তবে, এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে এর চাহিদা আরও বাড়বে। স্থানীয় কিছু উৎপাদক তাদের পণ্যের গুণগত মান এবং প্যাকেজিংয়ের উপর জোর দিচ্ছেন।

তারা বিশ্বাস করেন, ভোক্তাদের মধ্যে টিনের মাছের চাহিদা একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রবণতা হিসেবেই বজায় থাকবে।

এই বাজারের উত্থান-পতন অনেকখানি নির্ভর করছে আমদানি-রপ্তানির ওপর। টিনের মাছের বাজারের একটি বড় অংশ আমদানি নির্ভর হওয়ায়, শুল্ক এবং বাণিজ্য নীতি এই ব্যবসার ওপর প্রভাব ফেলে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি বিষয়টি বিবেচনা করি, তাহলে দেখা যায়, এখানেও খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে। অর্থনৈতিক চাপ বাড়ার কারণে মানুষ সাশ্রয়ী ও সহজে তৈরি করা যায় এমন খাবারের দিকে ঝুঁকছে।

যদিও টিনের মাছ এখনো আমাদের দেশে খুব একটা পরিচিত নয়, তবে ভবিষ্যতে হয়তো এমন ধরনের খাবারের চাহিদা বাড়তে পারে। বিশেষ করে, যদি খাদ্য নিরাপত্তা এবং খাদ্যমূল্য স্থিতিশীলতা নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা তৈরি হয়, তাহলে মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে সংরক্ষণ করা যায় এমন খাবারের দিকে ঝুঁকবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *