টাইটান সাবমার্সিবল ট্র্যাজেডি: ওশেনগেটের সিইও-র দায়িত্বে গাফিলতি, উঠে এল তদন্তে।
গত বছর জুন মাসে আটলান্টিক মহাসাগরে টাইটান ডুবোজাহাজের ভয়াবহ বিস্ফোরণে পাঁচজনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। সম্প্রতি, এই ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে মার্কিন কোস্ট গার্ডের মেরিন বোর্ড অব ইনভেস্টিগেশন তাদের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
সেই প্রতিবেদনে ডুবোজাহাজটির পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ওশেনগেটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) স্টকটন রাশ-এর গুরুতর গাফিলতি এবং নিরাপত্তা বিধিনিষেধের চরম অবজ্ঞাের চিত্র উঠে এসেছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্টকটন রাশ-এর স্বেচ্ছাচারিতা, প্রকৌশলগত প্রোটোকল অনুসরণ না করা এবং কর্মীদের নিরাপত্তা বিষয়ে উদ্বেগকে গুরুত্ব না দেওয়াই এই দুর্ঘটনার মূল কারণ। রাশ-এর নেতৃত্বাধীন ওশেনগেটে কর্মীদের মধ্যে ভীতি ও ত্রাসের পরিবেশ ছিল।
নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুললে চাকরি হারানোরও সম্ভবনা ছিল।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, রাশ প্রায়ই খরচ কমানোর জন্য ঝুঁকি নিতেন এবং প্রকৌশলগত সিদ্ধান্তগুলো একাই নিতেন, যা একটি মারাত্মক উদ্বেগের কারণ ছিল।
তিনি একইসাথে ছিলেন ওশেনগেটের সিইও, নিরাপত্তা কর্মকর্তা এবং ডুবোজাহাজের প্রধান পাইলট। এর ফলে তিনি নিজের খেয়ালখুশি মতো নিরাপত্তা সংক্রান্ত নিয়মকানুন তৈরি করতেন এবং সেগুলোর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতেন, যেখানে অন্য কারও কোনো মতামত বা তদারকির সুযোগ ছিল না।
তদন্তকারীরা বলছেন, রাশ-এর এমন কর্তৃত্বপূর্ণ এবং ত্রুটিপূর্ণ সিদ্ধান্তের ফলস্বরূপ, কর্মীদের মধ্যে নিরাপত্তাকে অবজ্ঞা করার প্রবণতা তৈরি হয়েছিল। এমনকি, যারা নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতেন, তাদের প্রায়ই অপমান করা হতো এবং তাদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করা হতো।
ডুবোজাহাজটির নকশা এবং নির্মাণেও গুরুতর ত্রুটি ছিল। কার্বন ফাইবারের তৈরি ডুবোজাহাজের কাঠামোতে ফাটল দেখা দিলেও তা মেরামতের চেষ্টা না করে, দ্রুত অভিযান চালানোর চেষ্টা করা হয়েছিল।
এই দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ছিলেন ব্রিটিশ বিলিওনেয়ার হামিশ হার্ডিং, পাকিস্তানি ব্যবসায়ী শাহজাদা দাউদ ও তার ছেলে সুলেমান দাউদ, এবং ফরাসি ডুবুরি পল-অঁরি নার্জিওলেট। এছাড়া, নিহত হন ওশেনগেটের সিইও স্টকটন রাশ নিজেও।
প্রতিটি সিটের মূল্য ছিল প্রায় আড়াই লাখ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২ কোটি ৯০ লক্ষ টাকার সমান।
তদন্ত প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, এই ট্র্যাজেডিটি সম্পূর্ণরূপে এড়ানো যেত। মেরিন বোর্ড অব ইনভেস্টিগেশন তাদের প্রতিবেদনে সম্ভাব্য ফৌজদারি অপরাধের প্রমাণ খুঁজে পেয়েছে এবং এই বিষয়ে তারা মার্কিন বিচার বিভাগের কাছে সুপারিশ করবে বলেও জানিয়েছে।
ওশেনগেটের পক্ষ থেকে এই ঘটনায় নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করা হয়েছে। তারা জানিয়েছে, দুর্ঘটনার পর কোম্পানিটি তাদের কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে গুটিয়ে নিয়েছে এবং তদন্তে কোস্ট গার্ডকে সব ধরনের সহযোগিতা করেছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন