৫০ বছরে: পাথরের দল থেকে কার্দি বি, কোন কলেজে ভিড় জমিয়েছেন তারকারা!

ঐতিহাসিক ‘টোড’স প্লেস’, ৫০ বছরে সঙ্গীতের এক উজ্জ্বল ঠিকানা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যের নিউ হ্যাভেনে অবস্থিত ‘টোড’স প্লেস’ (Toad’s Place) নামের একটি সঙ্গীতানুষ্ঠান কেন্দ্র, যা গত ৫০ বছর ধরে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেছে।

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে অবস্থিত এই ক্লাবটি শুধু একটি সাধারণ সঙ্গীত মঞ্চ নয়, বরং এটি সঙ্গীতের এক জীবন্ত জাদুঘর। যেখানে এক সময়ের সঙ্গীতের দিকপাল থেকে শুরু করে বর্তমান প্রজন্মের জনপ্রিয় শিল্পী – সবারই পদচিহ্ন বিদ্যমান।

১৯৭৫ সালে একটি ফরাসি রেস্তোরাঁ হিসেবে যাত্রা শুরু হলেও, পরবর্তীতে এটি সঙ্গীতের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ক্লাবের বর্তমান মালিক ব্রায়ান ফেলপস, যিনি ১৯৭৬ সাল থেকে এখানে কাজ করছেন এবং ১৯৯৮ সালে এর মালিকানা লাভ করেন।

তাঁর দূরদৃষ্টি এবং উদ্যম এই ক্লাবটিকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দিয়েছে। ফেলপস মনে করেন, বিভিন্ন ধরনের সঙ্গীত পরিবেশন এবং আকর্ষণীয় ইভেন্ট আয়োজনের মাধ্যমে তারা টিকে রয়েছেন।

‘টোড’স প্লেস’-এর খ্যাতি আকাশ ছুঁয়েছে, কারণ এখানে পারফর্ম করেছেন বিশ্ববিখ্যাত শিল্পীরা। রক অ্যান্ড রোল কিংবদন্তী ‘দ্য রোলিং স্টোনস’ (The Rolling Stones), গানের জাদুকর বব ডিলান, বিলি জোয়েল, ব্রুস স্প্রিংস্টিন, ইউটু, র‍্যামোনস, জনি ক্যাশ-এর মতো শিল্পীরা এখানে সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন।

এছাড়াও, র‍্যাপ সঙ্গীত শিল্পী কেনড্রিক ল্যামার, ড্রেক, কানিয়ে ওয়েস্ট, কার্দি বি, রান-ডিএমসি, স্নুপ ডগ এবং পাবলিক এনিমি’র মতো জনপ্রিয় শিল্পীরাও এই মঞ্চে নিজেদের প্রতিভা দেখিয়েছেন। ব্লুজ সঙ্গীতের কিংবদন্তি বি.বি. কিং, বো ডিডলি, মাডি ওয়াটার্স, উইলি ডিক্সন এবং জন লি হুকর-এর মতো শিল্পীরাও এই ক্লাবের পরিচিতি বাড়িয়েছেন।

জ্যাজ সঙ্গীতের দিকপাল কাউন্ট বেসি, ডিযি গিলিস্পি এবং হার্বি হ্যানকক-এর মতো শিল্পীদের পদচিহ্নও এখানে বিদ্যমান।

এই ক্লাবটির টিকে থাকার পেছনে অন্যতম কারণ ছিল এখানকার পরিবেশ। প্রায় ১০০০ জন ধারণক্ষমতার এই ক্লাবটিতে সঙ্গীতের বিভিন্ন ধারার পরিবেশনা দর্শকদের আকৃষ্ট করেছে। বিভিন্ন ধরনের সঙ্গীতের পাশাপাশি এখানে নাচের আয়োজনও করা হতো, যা দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।

‘টোড’স প্লেস’-এর ইতিহাসে কিছু বিশেষ মুহূর্ত আজও উজ্জ্বল হয়ে আছে। ১৯৮৯ সালে ‘দ্য রোলিং স্টোনস’-এর অপ্রত্যাশিত পারফর্মেন্স ছিল এমনই একটি ঘটনা। তাদের আসন্ন ‘স্টিল হুইলস’ (Steel Wheels) সফরের আগে, দলটি এখানে একটি ছোট কনসার্ট করার সিদ্ধান্ত নেয়।

সেই রাতে টিকিট মূল্য ছিল মাত্র ৩.০১ মার্কিন ডলার, যা তৎকালীন বিনিময় হারে প্রায় ৩০০ টাকার সমান ছিল। বব ডিলান ১৯৯০ সালে এখানে টানা চার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে গান গেয়েছিলেন, যা তাঁর দীর্ঘতম পারফর্মেন্সগুলোর মধ্যে অন্যতম।

এছাড়াও, ইউটু-এর মতো ব্যান্ড, যারা শুরুতে খুব পরিচিত ছিল না, তারাও এখানে পারফর্ম করে নিজেদের পরিচিতি বাড়িয়েছে।

‘টোড’স প্লেস’-এর সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হলো সঙ্গীতের বিভিন্ন ধারার সংমিশ্রণ। ক্লাবের মালিক ব্রায়ান ফেলপস মনে করেন, বিভিন্ন ধরনের সঙ্গীতানুষ্ঠান, বিশেষ করে র‍্যাপ সঙ্গীতের কনসার্টগুলো, দর্শকদের আকৃষ্ট করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

নিউ হ্যাভেনের এই সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি শুধু একটি ক্লাব নয়, বরং সঙ্গীতের একটি মিলনস্থল। এখানে আসা শিল্পীরা যেমন সম্মানিত হন, তেমনি এখানকার পরিবেশ দর্শকদের জন্য একটি বিশেষ অভিজ্ঞতা তৈরি করে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এমন দীর্ঘকাল ধরে চলা কোনো সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হয়তো সহজে খুঁজে পাওয়া যাবে না, তবে ঢাকার ‘শিল্পকলা একাডেমি’ বা ‘আঁলিয়স ফ্রঁসেজ’-এর মতো স্থানগুলো সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। ‘টোড’স প্লেস’ তাই সঙ্গীতের বিশ্ব-মানচিত্রে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *