ফোনে মগ্ন হয়ে টয়লেটে বসে থাকলে হতে পারে পাইলস!
বর্তমান ডিজিটাল যুগে স্মার্টফোন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত, স্মার্টফোন আমাদের সঙ্গেই থাকে। বাথরুমও এর ব্যতিক্রম নয়।
অনেকেই টয়লেটে বসে ফোন ব্যবহার করেন, কিন্তু এই অভ্যাস ডেকে আনতে পারে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি। সম্প্রতি হওয়া গবেষণা বলছে, টয়লেটে বসে ফোন ব্যবহারের কারণে পাইলস বা অর্শ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনের একটি হাসপাতালে (Beth Israel Deaconess Medical Center) হওয়া একটি গবেষণায় ১২৫ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের বাথরুমের অভ্যাস বিশ্লেষণ করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ টয়লেটে বসে ফোন ব্যবহার করেন।
আর যারা টয়লেটে বসে ফোন ব্যবহার করেন, তাদের পাইলস হওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের চেয়ে প্রায় ৪৬ শতাংশ বেশি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, টয়লেটে বসে দীর্ঘক্ষণ ফোন ব্যবহারের কারণে আমাদের মলদ্বারের (rectum) শিরাগুলোতে চাপ পরে। এর ফলে রক্ত জমাট বেঁধে ফুলে যায় এবং সেখান থেকেই পাইলস হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
যখন আমরা টয়লেটে বসি, তখন স্বাভাবিকভাবেই আমাদের পশ্চাৎদেশে চাপ পরে। এর সাথে যখন আমরা ঝুঁকে ফোন দেখি, তখন এই চাপ আরও বাড়ে। চিকিৎসকরা বলছেন, দীর্ঘক্ষণ ধরে এই অবস্থায় থাকার কারণে শিরাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং পাইলস দেখা দেয়।
পাইলস বা অর্শ (Bangla Term to be inserted Here) একটি সাধারণ সমস্যা, যা অনেক মানুষকে ভোগায়। এর মূল কারণগুলো হলো কোষ্ঠকাঠিন্য, অতিরিক্ত চাপ দিয়ে মলত্যাগ করা, দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা, গর্ভাবস্থা এবং কম ফাইবারযুক্ত খাবার গ্রহণ করা।
পাইলসের প্রাথমিক লক্ষণগুলো হলো—মলদ্বারে চুলকানি, অস্বস্তি, ফোলাভাব, এবং মলত্যাগের সময় রক্ত পড়া। কারো কারো ক্ষেত্রে মলদ্বারে ব্যথাসহ ফোলা মাংসের পিণ্ডও দেখা দিতে পারে।
পাইলস প্রতিরোধের সবচেয়ে ভালো উপায় হলো বাথরুমের অভ্যাস পরিবর্তন করা। টয়লেটে বসে ফোন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
এছাড়া, স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা অনুসরণ করা জরুরি।
- উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার: খাবারের তালিকায় প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি, ফল, এবং শস্য রাখতে হবে। প্রতিদিন ২৫-৩০ গ্রাম ফাইবার গ্রহণ করা উচিত।
আমাদের দেশে পাওয়া যায় এমন কিছু উচ্চ-ফাইবারযুক্ত খাবার হলো—ডাটা, পালং শাক, কলা, পেয়ারা, এবং বিভিন্ন ধরনের ডাল।
- পর্যাপ্ত জল পান: পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করা কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন পর্যাপ্ত জল পান করলে শরীর আর্দ্র থাকে, যা হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে।
- নিয়মিত ব্যায়াম: নিয়মিত ব্যায়াম করলে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করা যায়। হালকা হাঁটাচলা বা শারীরিক কার্যকলাপও এক্ষেত্রে উপকারী।
- স্বাস্থ্যকর ভঙ্গি: ভারী কিছু তোলার সময় হাঁটু গেড়ে বসার চেষ্টা করুন এবং পিঠ সোজা রাখুন।
পাইলসের সমস্যা হলে, ঘরোয়া কিছু উপায়ে এর উপশম করা যেতে পারে। যেমন, ওভার-দ্য-কাউন্টার (OTC) ক্রিম বা সাপোজিটরি ব্যবহার করা যেতে পারে।
হালকা গরম পানিতে (Sitz bath) বসা আরাম দিতে পারে। এছাড়াও, বরফ ব্যবহার করে ফোলাভাব কমানো যেতে পারে। ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেনের মতো ঔষধ সেবন করা যেতে পারে।
যদি ঘরোয়া উপায়ে পাইলসের সমস্যা না কমে, অথবা সমস্যা গুরুতর আকার ধারণ করে, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী, অস্ত্রোপচারসহ অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিও গ্রহণ করতে হতে পারে।
পাইলস একটি সাধারণ সমস্যা হলেও, সচেতনতা এবং সঠিক জীবনযাত্রা অনুসরণ করে এর ঝুঁকি কমানো সম্ভব। সুতরাং, বাথরুমে ফোন ব্যবহার করা বন্ধ করুন, স্বাস্থ্যকর খাবার খান, পর্যাপ্ত জল পান করুন এবং নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
*সতর্কতা: এই নিবন্ধটি শুধুমাত্র তথ্য প্রদানের উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে এবং কোনো চিকিৎসা পরামর্শ নয়। স্বাস্থ্য বিষয়ক যে কোনো সমস্যার জন্য একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
তথ্য সূত্র: হেলথলাইন