জাপানের রাজধানী, টোকিও, শুধু একটি শহর নয়, বরং এক অসাধারণ অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার। আধুনিকতার ছোঁয়া আর ঐতিহ্যের মিশ্রণে এই শহর যেন এক জীবন্ত শিল্পকর্ম। যারা নতুন কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চান, তাদের জন্য টোকিও হতে পারে আদর্শ গন্তব্য।
টোকিওর অন্যতম আকর্ষণ হলো এর কারুশিল্প। “মোনোজুকুরি” নামক একটি জাপানি শব্দ রয়েছে, যা এই শহরের মানুষের সূক্ষ্ম কারুকার্য এবং গুণমানের প্রতি ভালোবাসাকে বোঝায়। এখানকার রেস্তোরাঁ, বাজার, স্টুডিও—সবখানেই এই শিল্পের ছোঁয়া পাওয়া যায়। পর্যটকদের জন্য এখানে সবসময়ই কিছু না কিছু নতুনত্ব অপেক্ষা করে।
টোকিওর রন্ধনশৈলীও বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত। এখানে একদিকে যেমন ঐতিহ্যবাহী জাপানি খাবার পাওয়া যায়, তেমনই আধুনিক বিশ্ব থেকে আসা নানা স্বাদের সংমিশ্রণে তৈরি হওয়া খাবারও বিদ্যমান। যারা ভোজনরসিক, তাদের জন্য টোকিও একটি অসাধারণ জায়গা।
শহরের সানগেনজায়া অঞ্চলে অবস্থিত একটি জনপ্রিয় স্থান হলো ‘টোকিও গিওজারো’। এখানে শুকরের মাংস এবং সবুজ পেঁয়াজ দিয়ে তৈরি গিওজা নামক খাবারটি বেশ প্রসিদ্ধ। এছাড়া, ‘ইজাকায়া হশিগুমিতে’ বিভিন্ন প্রকার ‘কুশিএজ’ উপভোগ করা যেতে পারে। এই খাবারটি অনেকটা আমাদের দেশের কাবাবের মতো, যা কাঠিতে গেঁথে পরিবেশন করা হয়। এখানকার ‘ইউকিহানাবি’ রেস্টুরেন্টেও হಕ್ಕাইডো অঞ্চলের বিশেষ খাবার পাওয়া যায়।
টোকিওর বাজারগুলোও কম আকর্ষণীয় নয়। ঐতিহ্যপূর্ণ ‘সুকিজি আউটার মার্কেট’-এ গেলে জাপানি সংস্কৃতির অন্যরকম রূপ দেখা যায়। এখানে তাজা সুশি থেকে শুরু করে নানান হস্তনির্মিত জিনিস পাওয়া যায়। এই বাজারের ‘তানাকা শোটেন’-এ ‘সাকেৎসুকে’ নামক বিশেষ ধরনের একটি খাবার পাওয়া যায়, যেখানে মাছকে সাকের মধ্যে ডুবিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। এছাড়া, ‘সুকিমোতো হামোনো’ নামক দোকানে বিভিন্ন ধরনের জাপানি ছুরি পাওয়া যায়। যারা মিষ্টি ভালোবাসেন, তারা ‘সুকিজি সোলতুকি’-তে যেতে পারেন, যেখানে স্ট্রবেরি দাইফুকু (এক ধরনের মোচি) পাওয়া যায়।
যারা জাপানি শিল্পকলা সম্পর্কে জানতে চান, তাদের জন্য টোকিও’র বিভিন্ন স্থান ঘুরে আসা আবশ্যক। ‘শুনকাএন বনসাই মিউজিয়াম’-এ গেলে শত শত বছরের পুরনো বনসাই গাছ দেখা যায়। এছাড়াও, ‘তাকাহাসি কোবো আর্ট স্টুডিও’-তে গিয়ে ‘ইউকিকো তাকাহাসির’ সাথে উকিও-এ বা কাঠের ব্লক প্রিন্টিংয়ের শিল্পকর্মও করতে পারেন। এই শিল্পকর্মগুলো জাপানের ঐতিহ্য বহন করে। যারা কফি ভালোবাসেন, তারা ‘কফি মেইয়া কাকুরো’-তে যেতে পারেন, যেখানে ওমাকাসে কফি অভিজ্ঞতা উপভোগ করা যায়।
টোকিও, আধুনিকতা এবং ঐতিহ্যের এক অনন্য মিশ্রণ। যারা নতুন কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চান এবং জাপানি সংস্কৃতিকে ভালোবাসেন, তাদের জন্য এই শহর হতে পারে একটি দারুণ গন্তব্য।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক