ঢাকার বাইরে যারা ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন, তাদের জন্য জাপান যেন এক অসাধারণ গন্তব্য। বিশেষ করে, দেশটির রাজধানী টোকিও, আধুনিকতা আর ঐতিহ্যের এক দারুণ মিশ্রণ।
অনেকেই হয়তো শহরের কোলাহল আর আধুনিক স্থাপত্যের ভিড়ে আসল টোকিওর সৌন্দর্য খুঁজে পান না। কিন্তু একটু গভীরে গেলেই দেখা যায়, এই শহরে লুকিয়ে আছে নানা ধরনের আকর্ষণ, যা ভ্রমণকে করে তোলে অবিস্মরণীয়।
আসুন, আজ আমরা টোকিওর কিছু বিশেষ দিক সম্পর্কে জানি, যা আপনার জাপান ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আরও সমৃদ্ধ করবে।
শুরুতেই আসা যাক উৎসবের কথায়। টোকিওতে সারা বছর ধরেই নানা ধরনের উৎসবের আয়োজন করা হয়।
গ্রীষ্মকালে কোয়েনজিতে অনুষ্ঠিত হওয়া আওয়া-ওডোরি উৎসবে হাজার হাজার মানুষ ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সজ্জিত হয়ে নাচের তালে অংশ নেয়। জুলাই মাসের শেষ শনিবার, সুমিদা নদীর তীরে অনুষ্ঠিত হয় মনোমুগ্ধকর ফায়ারওয়ার্কস ফেস্টিভ্যাল।
বসন্তকালে চেরি ফুলের উৎসব (হানামি) তো আছেই, যেখানে উজ্জ্বল গোলাপি ফুলের নিচে বসে পিকনিকের আনন্দ উপভোগ করা যায়।
এছাড়া, মেগুরো নদীর ধারে ফুলের সারিবদ্ধ দৃশ্য অথবা উয়েনো পার্কে সন্ধ্যায় লন্ঠন জ্বালিয়ে হাঁটা—এগুলোও হতে পারে চমৎকার অভিজ্ঞতা।
যারা শহরের পরিচিত গণ্ডির বাইরে কিছু নতুনত্বের স্বাদ নিতে চান, তারা ইয়ানাকার সরু পথগুলোতে ঘুরে আসতে পারেন।
এখানকার পুরোনো বাড়িঘর আর স্থানীয় পরিবেশ আপনাকে মুগ্ধ করবে। ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ভ্রমণের বিশেষজ্ঞ মান্ডি বারটোকের মতে, ওচানমিজুও একটি বিশেষ স্থান।
এখানে কাগজের কারুশিল্প দেখতে পাওয়া যায়, যেখানে দ্বিতীয় তলার গ্যালারিতে বিভিন্ন ধরনের ডিজাইন প্রদর্শিত হয়। এছাড়া, চতুর্থ তলার স্টুডিওতে কাগজ তৈরির কর্মশালাতেও অংশ নেওয়া যেতে পারে।
কাছেই রয়েছে কান্দা মায়োশিন মন্দির, যেখানে মাঙ্গা ও অ্যানিমে চরিত্রের ছবি দিয়ে সজ্জিত প্রার্থনা ফলক দেখা যায়। ওচানমিজুতে কফির জন্য ইমাসা ক্যাফেতে যেতে পারেন, যা এক সময়ের কাঠ ব্যবসায়ীর ঐতিহ্যপূর্ণ বাড়ি।
টোকিওর জাদুঘর আর গ্যালারিগুলোও আপনার ভ্রমণ তালিকায় যোগ করতে পারেন। উয়েনো পার্কে অবস্থিত টোকিও ন্যাশনাল মিউজিয়ামে জাপানের বৃহত্তম শিল্পকর্ম ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের সংগ্রহ রয়েছে।
এখানে নোহ মাস্ক থেকে শুরু করে প্রাচীন অস্ত্রের সম্ভার—সবকিছুই দেখতে পারবেন। এছাড়াও, ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ ওয়েস্টার্ন আর্টে রেনেসাঁ, বারোক ও রোকোকো ঘরানার চিত্রকর্ম উপভোগ করতে পারেন।
আধুনিক শিল্পের জন্য রুপ্পোঙ্গি জেলা ভ্রমণ করতে পারেন, যেখানে প্রতি বছর সেপ্টেম্বরে রুপ্পোঙ্গি আর্ট নাইট উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এখানকার ন্যাশনাল আর্ট সেন্টারে বিভিন্ন ধরনের বিশেষ প্রদর্শনী হয়ে থাকে।
টোকিওর আশেপাশে একদিনের জন্য ঘুরে আসার মতো অনেক সুন্দর জায়গা রয়েছে। যেমন, কামাকুরা। এখানে এক সময় জাপানের ক্ষমতার কেন্দ্র ছিল।
এখানকার কোতোকুইন মন্দিরের ‘দাইবুৎসু’ (Great Buddha), যা ১৩০০ শতকের দিকে নির্মিত হয়েছিল, তা আজও দর্শনার্থীদের কাছে অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। কামাকুরার কাকুরোঞ্জি মন্দিরটিও বেশ শান্ত ও সুন্দর।
এছাড়াও, নিক্কো, চুযেনজি লেক এবং ইজু ওশিমার মতো স্থানগুলোতেও ভ্রমণ করতে পারেন।
জাপানে ভ্রমণকালে সংস্কৃতি বিষয়ক ক্লাসে অংশ নেওয়াটা দারুণ অভিজ্ঞতা দিতে পারে। এখানে সুশি, তেরিয়াকি মাছ ও মিসো স্যুপ তৈরির ক্লাস করার সুযোগ আছে।
আসাকুসার মাইকোয়াতে কিমোনো পরে ঐতিহ্যবাহী চা অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারেন। এছাড়া, ইউশিমা স্টেশনের কাছে রিনশোইন মন্দিরে ধ্যান বা জাপানি ভাষায় যাকে ‘জাজেন’ বলা হয়, সেই সেশনে অংশ নিতে পারেন।
টোকিওর কোলাহল থেকে দূরে প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে ঐতিহ্যবাহী বাগানগুলোতে যেতে পারেন। কোইশিকাওয়া কোরাকুয়েন ও হামারিকিউর মতো বাগানগুলো খুবই শান্ত ও সুন্দর।
এখানকার পুকুর, বাঁকানো সেতু এবং আঁকাবাঁকা পথগুলো শহরের জীবনের একঘেয়েমি থেকে মুক্তি দিতে পারে।
সবশেষে, জাপানি খাবারের স্বাদ নেওয়ার সুযোগ তো আছেই। এখানকার স্থানীয় খাবারগুলো যেমন—ইয়াকিসোবা, রামেন এবং বিভিন্ন ধরনের ভাজা খাবার—স্বল্প খরচে উপভোগ করা যেতে পারে।
এছাড়া, মন্টেন-এর ওমাকাস-স্টাইলের সুশি অথবা সেইসোকায়-এর ঐতিহ্যপূর্ণ কাইসেকি মেনুও চেখে দেখতে পারেন।
সুতরাং, যারা টোকিও ভ্রমণে যেতে চান, তারা এই স্থানগুলো ঘুরে এসে তাদের ভ্রমণকে আরও উপভোগ্য করে তুলতে পারেন।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক