হাসির সুরে বিশ্বকে নাড়িয়ে দেওয়া টম লেহরার: প্রয়াত, স্তব্ধ সঙ্গীত জগৎ!

টম লেহরার প্রয়াণ: সঙ্গীতের ধারালো ব্যঙ্গবিদ্রূপ আর গণিতের জগতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের পতন।

যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা সঙ্গীত শিল্পী, ব্যঙ্গবিদ্রূপ রচয়িতা এবং গণিতজ্ঞ টম লেহরার ৯৭ বছর বয়সে জীবনাবসান হয়েছে। শনিবার (২ মার্চ, ২০২৪) তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের ক্যামব্রিজে নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ডেভিড হার্ডার নামের এক বন্ধু এই খবর নিশ্চিত করেছেন, তবে মৃত্যুর কারণ জানাননি।

লেহরার পরিচিতি ছিল বহুমুখী। তিনি যেমন ছিলেন সঙ্গীতের একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র, তেমনই গণিতের শিক্ষক হিসাবেও খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। সঙ্গীতের জগতে তিনি বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন সমাজের নানা অসঙ্গতি নিয়ে তাঁর তীক্ষ্ণ ব্যঙ্গাত্মক গানগুলোর জন্য। তাঁর গানের বিষয়বস্তু ছিল বিবাহ, রাজনীতি, বর্ণবাদ এবং স্নায়ুযুদ্ধসহ আরও অনেক কিছু। তাঁর গানগুলো মানুষের মনে গভীর রেখাপাত করত, হাসির মোড়কে পরিবেশিত হতো সমাজের কঠিন বাস্তব চিত্র।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৮ বছর বয়সে গণিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করা লেহরের মেধা ছিল অসাধারণ। পরবর্তীতে তিনি সঙ্গীতের প্রতি আকৃষ্ট হন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গানগুলোর মধ্যে ছিল “পয়জনিং পিজিয়নস ইন দ্য পার্ক”, “দ্য ওল্ড ডোপ পেডলার”, “বি প্রিপেয়ার্ড”, “দ্য ভ্যাটিকান র‍্যাগ”। শেষের গানটিতে তিনি ক্যাথলিক চার্চের আচার-অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যঙ্গ করেছেন।

লেহরার গানগুলো যেমন জনপ্রিয়তা পেয়েছিল, তেমনই তিনি গণিত চর্চাতেও মনোনিবেশ করেন। সঙ্গীতের জগৎ থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি শিক্ষকতা পেশায় ফিরে যান। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘকাল শিক্ষকতা করেছেন তিনি। এমনকি ২০২০ সালে, তিনি তাঁর গানের স্বত্ব উন্মুক্ত করে দেন, যাতে যে কেউ কোনো ফি ছাড়াই তাঁর গান ব্যবহার করতে পারেন।

টম লেহরার সঙ্গীতের ধারা ছিল অনন্য। তিনি তাঁর গানগুলোতে সঙ্গীতের প্রচলিত ধারাকে ব্যঙ্গ করেছেন, যেমন আধুনিক লোকসংগীত, রক অ্যান্ড রোল এবং আধুনিক জ্যাজ। তাঁর গানের মাধ্যমে পারমাণবিক ধ্বংসের হুমকি এবং জাতিগত বৈষম্যের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হয়েছেন। তবে তাঁর ব্যঙ্গ-কৌতুক ছিল মার্জিত এবং বুদ্ধিদীপ্ত, যা শ্রোতাদের মধ্যে সহজে গ্রহণীয়তা পেয়েছিল।

লেহরার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ, তাঁর গানগুলো নিয়ে ২০০০ সালে “দ্য রিমেইন্স অফ টম লেহরার” নামে একটি বক্স সেট প্রকাশিত হয়েছিল। তাঁর গানের প্রভাব ছিল অনেক শিল্পীর ওপর। র্যান্ডি নিউম্যান এবং “উইয়ার্ড আল” ইয়ানকোভিচ-এর মতো শিল্পীরাও তাঁর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছেন।

টম লেহরার ১৯২৮ সালে নিউইয়র্ক শহরে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে তিনি ব্রডওয়ে শো এবং ম্যানহাটনের আপার ওয়েস্ট সাইডে কাটানো সুন্দর দিনগুলোর কথা স্মরণ করতেন। ১৫ বছর বয়সে হার্ভার্ডে ভর্তি হয়ে তিনি গণিতে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।

তাঁর প্রয়াণে সঙ্গীতের জগৎ এবং গণিত উভয় ক্ষেত্রেই অপূরণীয় ক্ষতি হলো। টম লেহরার তাঁর সৃষ্টিশীলতার মাধ্যমে চিরকাল মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *