শৈশবে শেল স্যুট পরতে না পারার কারণ জানালেন টম রেভেনসক্রফট!

টম রেভেন্সক্রফটের জীবন: সঙ্গীতের জগৎ থেকে ঘরকন্নার জীবন।

সঙ্গীতের জগতে বেড়ে ওঠা, বাবার পেশার সূত্রে পরিচিতি, নিজস্ব পথ তৈরি করা—এমনই এক জীবনের গল্প শোনালেন বিবিসির রেডিও উপস্থাপক টম রেভেন্সক্রফট।

তাঁর বাবা ছিলেন কিংবদন্তি ডিজে জন পিল। সঙ্গীতের প্রতি ভালোবাসা যেন তাঁর জন্মগত।

বাবার তৈরি করা মিক্সটেপগুলি শুনেই তাঁর শৈশব কেটেছে, গাড়িতে করে দেশ-বিদেশ ঘোরার সময় সেই ক্যাসেটগুলি ছিল তাঁর সঙ্গী।

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে গ্রাঞ্জ (grunge) সঙ্গীতের উন্মাদনা ছিল তুঙ্গে।

সেই সময় বন্ধুদের সঙ্গে মিলে ‘ক্রাস্টি’ নামে পরিচিত হতেন তাঁরা, কারণ তাঁদের লম্বা চুল ছিল।

এরপর আসে ‘রেভ’ সংস্কৃতি।

সেই সময়ে হার্ডকোর ও জঙ্গলের প্রতি আকৃষ্ট হন টম ও তাঁর বন্ধুরা।

এমনকি ‘রেভার’ বলেও তাঁদের অপমান করা হতো। তবে, সেই দিনগুলোকেও তিনি গর্বের সঙ্গে স্মরণ করেন।

ছোটবেলায় একবার মা তাঁকে ‘শেল স্যুট’ পরতে দেননি, কারণ সেগুলি নাকি সহজে আগুন ধরে যাওয়ার সম্ভবনা ছিল।

তাঁর মতে, নতুন সঙ্গীত খুঁজে বের করাটা একটা শারীরিক অনুভূতি।

কোনো শব্দ শুনলে, ভালো লাগলে, তিনি সেটার গভীরে যান, যেন কোনো সুগন্ধ অনুসরণ করছেন।

বাবা জন পিল তাঁর সন্তানদের নিয়ে বিভিন্ন উৎসবে যেতেন।

উৎসবের সময় বাবা হয়তো অন্য কাজে ব্যস্ত থাকতেন, আর তাঁরা নিজেদের মতো ঘুরে বেড়াতেন।

উৎসবের সেই দিনগুলো ছিল বেশ অন্যরকম।

খাবার কিংবা ভালো পরিবেশের বালাই ছিল না।

চারিদিকে শুধু মানুষের আনাগোনা আর আগুনের লেলিহান শিখা।

ছোটবেলায় একটি অনুষ্ঠানে নির্বানা (Nirvana)-র গান শুনে তিনি ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন।

বাবার কাজের সূত্রে পুরো পরিবার সবসময় তাঁর সঙ্গেই থাকত।

রেডিও জগতের সঙ্গেই তাঁর বেড়ে ওঠা।

তাঁর মনে আছে, অনুষ্ঠানে গেলে সবাই তাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকত, যেন জানতে চাইত, এখানে একটা বাচ্চা কেন?

টমের কাছে সঙ্গীত ছিল বাবার জগৎ।

তাঁর মনে হতো, এখানে তাঁর প্রবেশাধিকার নেই।

বাবার মৃত্যুর পর তিনি অনুভব করেন, এটাই তাঁর ভালোবাসার জায়গা।

হয়তো বাবার শূন্যতা পূরণ করতেই তিনি এই পথে হেঁটেছেন।

রেডিওর প্রতি ভালোবাসা থেকেই তিনি নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন।

টম এখন একজন সফল রেডিও উপস্থাপক।

তিনি বিবিসি রেডিও সিক্স-এ ‘নিউ মিউজিক ফিক্স ডেইলি’ এবং ‘দ্য রেভার্স আওয়ার’ অনুষ্ঠান দুটি করেন।

ব্যক্তিগত জীবনে টম বিবাহিত এবং চার সন্তানের জনক।

ঘরকন্নার সব কাজ তিনি একাই করেন—রান্না করা, ঘর পরিষ্কার করা, কাপড় ধোওয়া—সবকিছুতেই তাঁর অবাধ বিচরণ।

তাঁর স্ত্রী নাকি এখনো পর্যন্ত ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহার করতে শেখেননি!

মাঝেমধ্যে গভীর রাতে বাড়ি ফিরলেও তিনি ভোরে উঠে সংসারের কাজ শুরু করেন।

চার সন্তানের বাবা হয়ে জীবনটা বেশ কঠিন, তবে তিনি এই কঠিন জীবনকে ভালোবাসেন।

তাঁর স্মৃতিশক্তি তেমন ভালো নয়।

ছেলে-মেয়ে বা স্ত্রীর জন্মদিন তাঁর মনে থাকে না।

এমনকি ফোন নম্বরও মনে রাখতে পারেন না।

তবে এর একটা সুবিধা আছে, তিনি কিছু ভুলে গেলে সে বিষয়ে অনুশোচনা করার সুযোগ পান না।

তাঁর বাবা সবসময় সন্তানদের মধ্যে কোনো উচ্চাকাঙ্খা দেখতে চাইতেন না।

টমের ভাষায়, প্রথমে এটা বেশ মজার ছিল, কিন্তু পরে তাঁরা বুঝলেন, এটা তেমন কাজের নয়!

বাবার কাছ থেকে পাওয়া এই শিক্ষাই হয়তো তাঁকে জীবনে এতটা নরম ও সংবেদনশীল করে তুলেছে।

৮০ বছর বয়সেও তিনি উৎসবে যেতে চান।

তাঁর মতে, এখনকার অনেক উৎসব তাঁর বাড়ির চেয়েও সুন্দর!

পুরোনো সেই নোংরা দিনগুলো তিনি মিস করেন।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *