আমেরিকার বৃহত্তম রেইনফরেস্টে: হিমবাহ আর ফিয়র্ডের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য!

বিশ্বের বৃহত্তম নাতিশীতোষ্ণ বৃষ্টি অরণ্য: আলাস্কার এক মনোমুগ্ধকর জগৎ।

উত্তর আমেরিকার সুদূর উত্তরে অবস্থিত আলাস্কা, যা তার বিশাল বন্য প্রকৃতির জন্য বিশ্বজুড়ে সুপরিচিত। এখানকার টঙ্গাস জাতীয় বনভূমি (Tongass National Forest) তেমনই এক বিস্ময়কর স্থান, যা শুধু আলাস্কার নয়, বরং পৃথিবীর বৃহত্তম নাতিশীতোষ্ণ বৃষ্টি অরণ্য হিসেবে পরিচিত।

প্রায় ১ কোটি ৭০ লক্ষ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এই বনভূমি যেন প্রকৃতির এক অপরূপ লীলাভূমি।

টঙ্গাস বনভূমি যেন এক জীববৈচিত্র্যের অভয়ারণ্য। এখানে রয়েছে অসংখ্য হিমবাহ, যা বরফের স্তর ভেদ করে তৈরি করেছে অসাধারণ সব দৃশ্য।

এর বাইরে, এখানকার গভীর ফিয়র্ডগুলো (fjord) একদিকে যেমন সমুদ্রের কাছাকাছি, তেমনই বনের গভীরে প্রবেশ করেছে, যা এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে তোলে।

নানা ধরনের বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল এই বনভূমি। বাদামী ভালুক, এলক (moose), নেকড়ে, ঈগল, হরিণ, এমনকি উড়ুক্কু কাঠবিড়ালিও এখানে অবাধে ঘুরে বেড়ায়। যারা বন্য জীবন ভালোবাসেন, তাদের জন্য টঙ্গাস এক স্বর্গরাজ্য।

এই বনের প্রধান আকর্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম হল এর জলপথ।

এখানকার নদী ও উপসাগরগুলোতে ঘুরে বেড়ানো পর্যটকদের জন্য এক দারুণ অভিজ্ঞতা।

এখানে আপনি দেখতে পাবেন নানা প্রজাতির স্যামন মাছ, হাম্পব্যাক ও কিলার হোয়েল (তিমি), সমুদ্র সিংহ, সিল এবং সি-ওটার সহ বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণী। এখানকার আদিবাসী মানুষের সংস্কৃতিও এই অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।

এখানকার স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়, যেমন – টিংগিট, হাইডা এবং সিমশিয়ান-এর মানুষেরা হাজার বছর ধরে এই অঞ্চলে বসবাস করে আসছেন।

টঙ্গাস বনভূমিতে ভ্রমণের সেরা সময় হল গ্রীষ্মকাল।

জুন থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে আবহাওয়া উষ্ণ থাকে, যা ভ্রমণের জন্য বেশ উপযোগী।

তবে নভেম্বরে এখানে ‘সিতকা হোয়েলফেস্ট’-এর (Sitka WhaleFest) আয়োজন করা হয়, যেখানে স্থানীয় সামুদ্রিক জীবন সম্পর্কে জানার সুযোগ থাকে।

যারা একটু নির্জনতা পছন্দ করেন, তাদের জন্য ভ্রমণের আদর্শ সময় হতে পারে মে মাস অথবা সেপ্টেম্বর মাস।

আলাস্কার জুনো (Juneau) শহর থেকে এখানে সহজে যাওয়া যায়।

এছাড়া, কেচিকা এবং সিতকা থেকেও এখানে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে।

সাধারণত, পর্যটকেরা ক্রুজ জাহাজে করে এখানে আসেন।

বনভূমি ঘুরে দেখার জন্য হাইকিং, মাছ ধরা, ডগ-স্লাইডিং অথবা জিপ লাইনিং-এর মতো বিভিন্ন কার্যকলাপ উপভোগ করা যেতে পারে।

টঙ্গাস ন্যাশনাল ফরেস্টে ভ্রমণের আগে কিছু প্রস্তুতি নেওয়া দরকার।

এখানকার আবহাওয়া বেশ শীতল হতে পারে, তাই গরম কাপড় সঙ্গে রাখা ভালো।

বৃষ্টির সম্ভাবনাও থাকে, তাই রেইনকোট নেওয়া আবশ্যক।

এছাড়া, সেলফোনের নেটওয়ার্ক সব সময় নাও থাকতে পারে, তাই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা ভালো।

যদি আপনি প্রকৃতির মাঝে কিছু দিন কাটাতে চান, তাহলে টঙ্গাস ন্যাশনাল ফরেস্ট হতে পারে আপনার জন্য আদর্শ স্থান।

এখানকার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য, বন্য জীবন এবং বিভিন্ন অভিজ্ঞতার মাধ্যমে আপনি প্রকৃতির এক নতুন রূপ অনুভব করতে পারবেন।

তথ্য সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লেজার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *