যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তারা সম্প্রতি ইয়েমেনে সামরিক অভিযান সংক্রান্ত তথ্যের গোপনীয়তা নিয়ে মুখ খুলেছেন। জানা গেছে, হোয়াইট হাউসের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে দায়ী করছেন, কারণ তিনি একটি মেসেজিং গ্রুপে সম্ভবত গোপন তথ্য আদান-প্রদান করেছিলেন। এই ঘটনায় মার্কিন প্রশাসনের মধ্যে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পেটি হেগসেথ সম্ভবত একটি মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে কিছু সংবেদনশীল তথ্য আদান-প্রদান করেছেন, যেখানে সাংবাদিকও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। সিআইএ পরিচালক জন র্যাটক্লিফ এবং জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক, তুলসী গাবার্ড সিনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটির তীব্র জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়েন। তারা জানান, ওই গ্রুপ চ্যাটে কোনো গোপন বা শ্রেণীবদ্ধ তথ্য ছিল না।
তবে, যখন তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, হেগসেথ ইরান-সমর্থিত জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আসন্ন হামলার বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করেছিলেন কিনা, তখন দুই শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রীর উপর দায় চাপান। র্যাটক্লিফ জানান, “প্রতিরক্ষা সচিবই হচ্ছেন কোনো তথ্য গোপন রাখার মূল কর্তৃপক্ষ।
তুলসী গাবার্ডকে যখন এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়, তখন তিনি প্রতিরক্ষা সচিব এবং জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের ওপর বিষয়টি ছেড়ে দেন।
আলোচিত গ্রুপ চ্যাটটিতে মূলত মার্চ মাসে হওয়া হামলাগুলোর যৌক্তিকতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যদিও এটি ছিল শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে সংবেদনশীল আলোচনা, তবে এটিকে গোপন রাখার মতো তেমন কিছু ছিল না। তবে হেগসেথের পাঠানো টেক্সটগুলোতেই যত বিপত্তি। জানা গেছে, সেখানে “ইয়েমেনে আসন্ন হামলা, লক্ষ্যবস্তু, ব্যবহৃত অস্ত্র এবং আক্রমণের কৌশল”-এর মতো বিষয়গুলো উল্লেখ ছিল।
একাধিক বর্তমান ও প্রাক্তন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আক্রমণের সময়, লক্ষ্যবস্তু বা অস্ত্র ব্যবস্থার মতো বিষয় নিয়ে আলোচনা সবসময়ই গোপন রাখা হয়। কারণ, এতে মার্কিন সামরিক সদস্যদের জীবন ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
কর্মকর্তারা “Signal” নামের একটি এনক্রিপ্টেড মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেছিলেন, যা গোপন তথ্য আদান-প্রদানের জন্য অনুমোদিত নয়। রিপাবলিকান সিনেটর টম কটন এক পর্যায়ে মন্তব্য করেন, র্যাটক্লিফ ও গাবার্ড সম্ভবত সামরিক গোয়েন্দা তথ্য এবং সিআইএর মতো বেসামরিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে পার্থক্য করছেন।
শুরুতে, হেগসেথ টেক্সট বার্তার মাধ্যমে যুদ্ধের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার কথা অস্বীকার করেন। যদিও ট্রাম্প প্রশাসন এর আগে বার্তাগুলো আসল বলে স্বীকার করেছিল। হেগসেথ সাংবাদিকদের জানান, “আমরা কেউ যুদ্ধের পরিকল্পনা নিয়ে টেক্সট করিনি।”
বিষয়টি পরিষ্কার করার জন্য, হেগসেথ-এর শ্রেণিবদ্ধকরণ ক্ষমতা নিয়ে বিতর্ক চলছে। যদিও হেগসেথ এই ধরনের তথ্য প্রকাশ করতে পারেন, তবে র্যাটক্লিফ জানিয়েছেন, তিনি সে বিষয়ে অবগত নন।
এই ঘটনার জেরে র্যাটক্লিফ এবং গাবার্ড সরাসরি হেগসেথকে অভিযুক্ত করেননি। তবে র্যাটক্লিফ সতর্কতার সঙ্গে উল্লেখ করেছেন, সিগন্যাল মার্কিন সরকারের কম্পিউটারগুলোতে ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত, যা সিআইএও ব্যবহার করে। যদিও তিনি হেগসেথের বার্তার দায় নেননি।
এই ঘটনার জল কতদূর গড়ায়, এখন সেটাই দেখার বিষয়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন