যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন রাজ্যের সরকার তাদের প্রতীক চিহ্নের তালিকা বাড়ানোর কথা ভাবছে, আর তা নিয়ে চলছে জোর আলোচনা। এই প্রতীকগুলোর মধ্যে খাদ্য থেকে শুরু করে লোককথার সৃষ্টি— সবই রয়েছে।
রাজ্যের এমন প্রতীক নির্ধারণের পেছনে কি কারণ, তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। নিউ মেক্সিকোতে টর্টিলাকে রাজ্যের রুটি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব উঠেছিল, যা আইনপ্রণেতাদের সমর্থনও পেয়েছিল।
কিন্তু রাজ্যের গভর্নর মিশেল লুজান গ্রিশাম এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। তাঁর মতে, রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলোর সমাধানে মনোযোগ দেওয়া উচিত, যেখানে এমন প্রতীক নির্ধারণের চেয়ে বেশি কিছু করার আছে।
তিনি আরও জানান, রাজ্যের নিজস্ব সংস্কৃতিকে উদযাপন করতে তিনি পছন্দ করেন, তবে এখনকার পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই ধরনের প্রস্তাবের গুরুত্ব কম।
শুধু নিউ মেক্সিকো নয়, অন্যান্য রাজ্যও তাদের প্রতীক চিহ্নের তালিকায় নতুন কিছু যোগ করতে চাইছে। জর্জিয়ার আইনপ্রণেতারা সম্প্রতি রাজ্যের রুটি হিসেবে ‘কর্নব্রেড’-কে স্বীকৃতি দেওয়ার বিল পাস করেছেন।
ওরেগন রাজ্যে টি-বোন স্টেককে আনুষ্ঠানিক প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করার বিষয়ে আলোচনা চলছে। ক্যালিফোর্নিয়ায় আবার ‘বিগফুট’-কে রাজ্যের প্রতীক করার প্রস্তাব উঠেছে, যদিও এই প্রাণীটির অস্তিত্ব এখনো পর্যন্ত প্রমাণিত হয়নি।
আইন তৈরি করা সবসময় কঠিন বিষয় নয়। অনেক সময় হালকা বিষয়ও এতে অন্তর্ভুক্ত থাকে, যা সবার মধ্যে ঐকমত্য তৈরি করতে সাহায্য করে।
টর্টিলাকে রাজ্যের রুটি করার প্রস্তাবটি এসেছিল চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী অ্যাডেলিন ম্যাকিনটশের কাছ থেকে। এই প্রস্তাবের মাধ্যমে, টর্টিলা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ময়দার ধরন নিয়ে আলোচনা হয়।
আলোচনায় উঠে আসে, খাবারের ধরনের ওপর নির্ভর করে ময়দার ভিন্নতা থাকতে পারে। এমনকি, আদিবাসী জনগোষ্ঠীর লোকেরা কীভাবে পাথরের ওপর নীল ভুট্টার আটা দিয়ে প্রথম রুটি তৈরি করেছিল, সে ইতিহাসও আলোচনা করা হয়।
সিনেটর সিন্ডি নাভা তাঁর মায়ের হাতে তৈরি টর্টিলার কথা উল্লেখ করে বলেন, এটি কেবল একটি সাধারণ আইন নয়, বরং সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
১৮০০ শতাব্দীর শেষের দিকে, রাজ্যগুলো তাদের সংস্কৃতি এবং বাসিন্দাদের মধ্যে গর্বের অনুভূতি জাগানোর জন্য সরকারি প্রতীক তৈরি করতে শুরু করে। প্রথমে ফুল ও পতাকা, এরপর জীবাশ্ম এবং খাদ্য অন্তর্ভুক্ত হয়।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, এটি একটি আকর্ষণীয় বিপণন হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে, যা আলোচনা ও বাণিজ্যের উন্নতিতে সহায়ক। যেমন, ওরেগনের ইতিমধ্যে সরকারি বাদাম, ফল ও পাই রয়েছে।
টি-বোন স্টেককে স্বীকৃতি দিলে রাজ্যের অর্থনীতিতে গবাদি পশুর অবদানকে সম্মান জানানো হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
টেনেসিতে জনপ্রিয় খাবার ‘ন্যাশভিল হট চিকেন’-কে রাজ্যের খাদ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব উঠেছে। অন্যদিকে, নেভাডা রাজ্যে ‘পিকন পাঞ্চ’ নামক একটি ককটেলকে রাজ্যের প্রতীক হিসেবে যুক্ত করার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে।
নর্থ ক্যারোলাইনায় ‘মোরোভিয়ান স্টার’-কে রাজ্যের প্রতীক করার প্রস্তাব এসেছে, যা বেথেলহেমের তারার প্রতীক হিসেবে ক্রিসমাসের সঙ্গে সম্পর্কিত। মিনেসোটা রাজ্য ‘উরসা মাইনর’ নক্ষত্রমণ্ডলকে তাদের তালিকায় যুক্ত করার কথা ভাবছে।
টেক্সাস রাজ্যে একটি কামানকে আনুষ্ঠানিক বন্দুক হিসেবে যুক্ত করার প্রস্তাব উঠেছে। এই রাজ্যের ইতিমধ্যে একটি সরকারি হ্যান্ডগান রয়েছে—কোল্ট ওয়াকার পিস্তল।
প্রস্তাবকদের মতে, কামান-এর মতো ঐতিহাসিক অস্ত্র রাজ্যের স্বাধীনতা সংগ্রামের স্মৃতি বহন করে। কিছু রাজ্য প্রকৃতির প্রতি মনোযোগ দিয়েছে।
কলোরাডোর তালিকায় ‘এগারিকাস জুলিয়াস’ নামক একটি মাশরুম যুক্ত হয়েছে, যা সেখানকার বনগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আইওয়া ও মিশিগান রাজ্যে প্রজাপতিকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব এসেছে।
মিশিগানে ব্ল্যাক সোয়ালোটেইল ও মনাক প্রজাপতি নিয়ে বিতর্ক চলছে। মিনেসোটা রাজ্যের আইনপ্রণেতারা একটি বিশাল আকারের (ছোট ভালুকের মতো) ‘জায়ান্ট বিভার’-কে রাজ্যের জীবাশ্ম হিসেবে গ্রহণ করার কথা বিবেচনা করছেন।
ক্যালিফোর্নিয়ার আইনপ্রণেতারা সৌরশক্তি এবং ‘বিগফুট’-কে রাজ্যের তালিকায় যুক্ত করার কথা ভাবছেন। ক্যালিফোর্নিয়ায় দেশের বৃহত্তম সৌর বাজার রয়েছে।
আর ‘বিগফুট’-এর সমর্থকরা বলছেন, এটি জনপ্রিয় সংস্কৃতির অংশ এবং রাজ্যের পর্যটনে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস