ফরাসি মুলুকে সাইকেলের মহাযুদ্ধ: বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলা ট্যুর ডি ফ্রান্স।
খেলাধুলার জগৎে অন্যতম কঠিন এক প্রতিযোগিতা হলো ট্যুর ডি ফ্রান্স। ফ্রান্সের বুকে আয়োজিত এই সাইকেল দৌড় শুধু শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষা নয়, এটি একইসাথে মানসিক দৃঢ়তারও প্রমাণ।
১৯০৩ সালে প্রথমবার অনুষ্ঠিত হওয়া এই প্রতিযোগিতাটি ২০২৩ সালে ১১০ বছরে পদার্পণ করেছে। প্রতি বছরই বিশ্বজুড়ে সাইক্লিং প্রেমীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে এই রেস।
এই প্রতিযোগিতার মূল আকর্ষণ হলো এর দীর্ঘ পথ। সাধারণত, ২১ দিনের এই রেসে প্রায় ২,০০০ মাইলের বেশি পথ পাড়ি দিতে হয়।
ফ্রান্সের বিভিন্ন অঞ্চল ও শহরের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময়, প্রতিযোগীদের কঠিন সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়। সমতল ভূমি থেকে শুরু করে পাহাড়, এমনকি দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলও এই পথের অংশ।
আবহাওয়ার ভিন্নতা, অক্সিজেনের অভাব, এবং শারীরিক ক্লান্তির সঙ্গে লড়াই করে বিজয়ী হওয়ার জন্য প্রয়োজন হয় অসাধারণ দক্ষতা ও ধৈর্যের।
ট্যুর ডি ফ্রান্স-এর আকর্ষণ শুধু এর প্রতিযোগিতাই নয়, এর পেছনের গল্পগুলোও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই দৌড়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বহু কিংবদন্তি সাইক্লিস্টের নাম, যাদের বীরত্বপূর্ণ কাহিনী আজও মানুষের মুখে ফেরে।
জ্যাক আনকুয়েতিল, বার্নার্ড হিনল্ট, গ্রেগ লেমন্ড, মিগুয়েল ইনদুরাইন, ক্রিস ফ্রুমের মতো কিংবদন্তি সাইক্লিস্টরা এই প্রতিযোগিতায় নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন।
তবে, এই গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের মাঝে বিতর্কও কম নেই। ল্যান্স আর্মস্ট্রং-এর ঘটনা এখনো ক্রীড়াপ্রেমীদের মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে।
ডোপিং-এর অভিযোগে তার সাতটি খেতাব কেড়ে নেওয়া হয়।
ট্যুর ডি ফ্রান্স শুধু একটি খেলা নয়, এটি একটি উৎসবও বটে। রাস্তার পাশে ভিড় করা দর্শকদের উল্লাস, পতাকা ও ব্যানার হাতে তাদের চিৎকার, আর সাইক্লিস্টদের উৎসাহ যোগানো – সব মিলিয়ে এক আনন্দময় পরিবেশ তৈরি হয়।
প্রতি বছর কয়েক লক্ষ দর্শক এই রেস দেখতে আসে।
এই প্রতিযোগিতার ছবি তোলার জন্য ফটোগ্রাফারদেরও অনেক পরিশ্রম করতে হয়। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) ফটোগ্রাফাররা মোটরসাইকেলে চড়ে ছবি তোলেন, যা তাদের জন্য একটি বিশেষ অভিজ্ঞতা।
একদিকে যেমন দ্রুত ছবি তোলার চ্যালেঞ্জ থাকে, তেমনি রাস্তার পাশের মনোরম দৃশ্যগুলো ক্যামেরাবন্দী করার সুযোগও তারা পান।
ট্যুর ডি ফ্রান্স একটি বৈশ্বিক ইভেন্ট, যা খেলাধুলার সীমানা ছাড়িয়ে সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে গেছে। এটি শুধু সাইক্লিস্টদের জন্য নয়, সারা বিশ্বের ক্রীড়াপ্রেমীদের জন্য একটি অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস