শিরোনাম: ফ্লোরিডা ও ক্যারিবিয়ান উপকূলে রেকর্ড পরিমাণ শৈবালের আক্রমণ: পরিবেশ বিপর্যয়ের সতর্কবার্তা।
আটলান্টিক মহাসাগরে বিষাক্ত শৈবালের এক ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে, যা পরিবেশের জন্য এক গুরুতর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এই বছর সাগর-শেওলার (Sargassum) বিস্তার অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে।
ফ্লোরিডা এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের সমুদ্র সৈকতগুলোতে এর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে, যা সেখানকার অর্থনীতি ও বাস্তুতন্ত্রের জন্য এক অশনি সংকেত।
প্রায় ৫,৫০০ মাইল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই শৈবালের স্তূপ শুধু দৃষ্টিকটু নয়, বরং এটি উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বিশেষ করে, ফ্লোরিডার উপকূল এবং মিয়ামি এলাকার সমুদ্র সৈকতগুলোতে এর আক্রমণ দেখা যাচ্ছে।
অতিরিক্ত পরিমাণে এই শৈবাল জমা হওয়ার কারণে তা পচন ধরে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, যা পর্যটকদের কাছে চরম বিরক্তির কারণ হচ্ছে।
ফ্লোরিডা আটলান্টিক ইউনিভার্সিটির হারবার ব্রাঞ্চ ওশেনোগ্রাফিক ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ব্রায়ান লাপয়েন্ট জানান, ২০১১ সাল থেকে ক্যারিবিয়ান অঞ্চল, মেক্সিকোর উপসাগর এবং দক্ষিণ ফ্লোরিডায় এই শৈবালের ব্যাপক বিস্তার দেখা যাচ্ছে।
এপ্রিল মাস পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, এ বছরের শৈবালের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ কোটি ১০ লক্ষ টনে, যা ২০২২ সালের রেকর্ড থেকেও ৪০ শতাংশ বেশি।
এই শৈবালের বিস্তারের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন এবং কৃষিকাজে ব্যবহৃত সার থেকে নির্গত অতিরিক্ত নাইট্রোজেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় শৈবালের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটছে।
এছাড়া, কৃষি জমিতে ব্যবহৃত সার বৃষ্টির জলের সঙ্গে মিশে নদী হয়ে সমুদ্রে প্রবেশ করে, যা শৈবালের বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে, অ্যামাজন ও মিসিসিপি নদীর অববাহিকা অঞ্চলে ব্যাপক হারে সার ব্যবহারের ফলে এই সমস্যা আরও তীব্র হচ্ছে।
উপকূলে এই শৈবালের স্তূপ জমে থাকার কারণে পর্যটন শিল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সৈকতে আসা পর্যটকদের কাছে এটি চরম অস্বস্তিকর এবং অনেক ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ঝুঁকিও তৈরি করছে।
পচে যাওয়া শৈবাল থেকে হাইড্রোজেন সালফাইড ও অ্যামোনিয়ার মতো বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হয়, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এর ফলে সমুদ্রের পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়, যা সামুদ্রিক জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ।
তবে, বিজ্ঞানীরা এই সমস্যা সমাধানে কিছু উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। মেক্সিকোর কুইন্টানা রু রাজ্যের গভর্নর মারা লেজামা জানিয়েছেন, তারা এরই মধ্যে সমুদ্র থেকে শৈবাল অপসারণের জন্য নৌবাহিনীর সহায়তা নিচ্ছেন এবং উপকূল রক্ষার জন্য প্রায় ৬ মাইল দীর্ঘ একটি প্রতিবন্ধক তৈরি করেছেন।
তাছাড়া, বিজ্ঞানীরা শৈবালকে কাজে লাগিয়ে জৈব জ্বালানি তৈরি, বিল্ডিং তৈরির উপাদান ও জল শোধনের মতো বিভিন্ন উদ্ভাবনী ধারণা নিয়ে কাজ করছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতি একটি সতর্কবার্তা। আমাদের পরিবেশের প্রতি আরও সচেতন হতে হবে এবং টেকসই উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
পরিবেশ বিপর্যয় রোধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে, এর ফলস্বরূপ মারাত্মক পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে, যা আমাদের সকলের জন্য উদ্বেগের কারণ।
তথ্য সূত্র: সিএনএন