কর্মক্ষেত্রে প্রতিকূল পরিবেশ: কেমন হলে বুঝবেন এবং প্রতিকারের উপায় বর্তমান সময়ে কর্মপরিবেশ নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে, বাড়ছে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক আলোচনাও।
আমাদের চারপাশে এমন অনেক কর্মক্ষেত্র রয়েছে যেখানে কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বসের খারাপ ব্যবহার, সহকর্মীদের অসহযোগিতা, কিংবা অতিরিক্ত কাজের চাপ—এসব কারণে কর্মীরা প্রায়ই মানসিক অবসাদে ভোগেন।
এমন প্রতিকূল পরিবেশে আপনি কিভাবে বুঝবেন, এবং প্রতিকারের উপায়গুলোই বা কি? একটি উদাহরণ দিয়ে শুরু করা যাক।
ধরুন, আপনি একটি নতুন অফিসে যোগ দিলেন। কয়েকদিন যেতে না যেতেই বুঝতে পারলেন, অফিসের পরিবেশটা খুব একটা ভালো নয়।
বসের কথায় কথায় চিৎকার, সহকর্মীদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও শ্রদ্ধার অভাব, কাজ নিয়ে সবসময় অনিশ্চয়তা—এগুলো যদি নিয়মিত ঘটনা হয়, তাহলে বুঝতে হবে কর্মপরিবেশে কিছু সমস্যা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে তা আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, কর্মক্ষেত্রে প্রতিকূল পরিবেশ চিহ্নিত করার কিছু উপায় আছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো—কর্মীদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থার অভাব, কথা বলার ক্ষেত্রে ভয়, এবং কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সহযোগিতা না পাওয়া।
এছাড়াও, যদি দেখেন একই পদে বারবার কর্মী নিয়োগ করা হচ্ছে, তবে বুঝতে হবে কর্মপরিবেশে নিশ্চয়ই কোনো সমস্যা আছে, যার কারণে কর্মীরা বেশিদিন টিকতে পারছে না।
তবে, প্রতিকূল কর্মপরিবেশ শুধু খারাপ ব্যবহার বা বসের খারাপ আচরণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। অনেক সময় এমন কিছু সূক্ষ্ম আচরণ থাকে যা কর্মীদের মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে।
যেমন—ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য, পরোক্ষ সমালোচনা, বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা থেকে কর্মীদের দূরে রাখা। এগুলোও এক ধরনের মানসিক নির্যাতনের শামিল।
যদি আপনি এমন পরিস্থিতিতে পড়েন, তাহলে সবার আগে নিজের মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিন। এক্ষেত্রে কিছু পদক্ষেপ নিতে পারেন:
- কথা বলুন: বিশ্বস্ত বন্ধু, পরিবার বা কোনো মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলে আপনার সমস্যাগুলো শেয়ার করুন। মনের কথা খুলে বললে অনেক সময় মানসিক চাপ কমে যায়।
- নথিভুক্ত করুন: আপনার প্রতি হওয়া খারাপ ব্যবহারগুলো লিখিত আকারে রাখুন। অফিসের ইমেইল, মেসেজ অথবা মিটিংয়ের রেকর্ড সংরক্ষণ করতে পারেন। ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে এই নথিগুলো কাজে আসবে।
- সীমানা তৈরি করুন: প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কিভাবে নিজেকে রক্ষা করবেন, সেই বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা রাখুন। বসের সাথে কাজের সম্পর্ক কেমন হবে, বা সহকর্মীদের সাথে কিভাবে মিশবেন, সে বিষয়ে নিজের জন্য কিছু নিয়ম তৈরি করুন।
- প্রতিকারের চেষ্টা করুন: সম্ভব হলে, কর্তৃপক্ষের কাছে আপনার অভিযোগ জানান। অনেক অফিসে কর্মীদের অভিযোগ জানানোর জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকে। তবে, কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে দ্রুত সাড়া না পেলে, অন্য কোনো উপায় খুঁজে বের করতে হবে।
- নতুন চাকরির সন্ধান করুন: যদি দেখেন, আপনার কর্মপরিবেশ কোনোভাবেই উন্নত হচ্ছে না, তাহলে নতুন চাকরির চেষ্টা শুরু করুন।
তবে মনে রাখতে হবে, প্রতিকূল কর্মপরিবেশ থেকে বেরিয়ে আসা সহজ না-ও হতে পারে। অনেক সময় অর্থনৈতিক বা সামাজিক কারণে চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
সেক্ষেত্রে ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে এবং নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
কর্মক্ষেত্রে সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করা শুধু কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব নয়, কর্মীদেরও এতে সমানভাবে সচেতন থাকতে হবে। নিজের অধিকার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকুন এবং প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিকার চেয়ে আপনার মানসিক স্বাস্থ্যকে সুরক্ষিত করুন।
তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস