বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে কর্মসংস্থান হ্রাস হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতির জেরে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিতে পারে, যার ফলস্বরূপ ২০২৫ সাল পর্যন্ত ৭ মিলিয়ন (৭০ লক্ষ) কর্মসংস্থান কমে যেতে পারে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাণিজ্য অস্থিরতা ও ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে বিশ্ব অর্থনীতির ভবিষ্যৎ কিছুটা দুর্বল। এর ফলস্বরূপ, আগে যেখানে ২০২৫ সালে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৫ কোটি ৩০ লক্ষ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির পূর্বাভাস ছিল, সেখানে এখন সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৬৩ লক্ষে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির কারণে সৃষ্ট এই পরিস্থিতির সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে বিভিন্ন দেশের শ্রমবাজারে। আইএমএফ (IMF)-এর পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছর বিশ্ব অর্থনীতির জিডিপি (GDP)-র বৃদ্ধি হতে পারে ২.৮ শতাংশ, যা আগে ছিল ৩.২ শতাংশ। মূলত, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য শুল্ক আরোপের কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
আইএলও-র তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৮ কোটি ৪০ লক্ষ কর্মসংস্থান সরাসরি বা পরোক্ষভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাহিদা ও বিনিয়োগের সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ৫ কোটি ৬০ লক্ষ এবং কানাডা ও মেক্সিকোর ১ কোটি ৩০ লক্ষ কর্মীর চাকরি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মার্কিন শুল্ক বৃদ্ধির কারণে শ্রমিকরা হয়তো তাদের আয়ের আংশিক বা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারেন। কারণ, ভবিষ্যতে বাণিজ্য নীতিতে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই বিভিন্ন দেশের ওপর, বিশেষ করে চীনসহ অন্যান্য বাণিজ্য সহযোগী দেশগুলোর পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করেছেন। আগামী ৯ জুলাইয়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র যদি অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে না পারে, তবে তাদের ওপর আরও কঠোর শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা রয়েছে।
এই শুল্কনীতি এবং এর কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তা ব্যবসা ও ভোক্তাদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। আইএলও মনে করে, এমন পরিস্থিতিতে নিয়োগকর্তারা নতুন কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হতে পারেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ব অর্থনীতির এই মন্দা বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। কারণ, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পসহ বিভিন্ন রপ্তানি খাত বিশ্ব অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি কর্মীর পাঠানো রেমিট্যান্সের (remittance) ওপরও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হলো তৈরি পোশাক শিল্প। বিশ্ব অর্থনীতির এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে, দেশের এই গুরুত্বপূর্ণ খাতেও প্রভাব পড়তে পারে। অনেক দেশ, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কানাডার মতো উন্নত দেশগুলোতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। তাই, বিশ্ব অর্থনীতির এই মন্দা বাংলাদেশের বাণিজ্য এবং অর্থনীতির ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে।
এছাড়াও, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি শ্রমিক, যাদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, তাদের কর্মসংস্থান ঝুঁকির মুখে পড়লে দেশের অর্থনীতিতে আরও বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন