যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ তীব্র হওয়ার আশঙ্কা ক্রমশ বাড়ছে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। উভয় দেশই একে অপরের পণ্যের ওপর শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি করেছে, যা শেয়ার বাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছে।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীন সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর শুল্ক ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে। এর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রও চীনের পণ্যের উপর শুল্কের পরিমাণ বাড়িয়েছে, যা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে।
উভয় দেশের এই পদক্ষেপের কারণে বিশ্বজুড়ে শেয়ার বাজারগুলোতে দরপতন হয়েছে। ইউরোপের বাজারগুলোতেও এর প্রভাব পড়েছে।
লন্ডনের এফটিএসই১০০ সূচক এবং প্যারিসের সিএসি ৪০ সূচকের উল্লেখযোগ্য পতন হয়েছে। জার্মানির ড্যাক্স এবং প্যান-ইউরোপীয় স্টকস ইউরোপ ৬০০ সূচকেও गिरावट দেখা গেছে।
এশিয়ার শেয়ার বাজারগুলোও এই ধাক্কা সামলাতে পারেনি। জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচক প্রায় ৩.৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার কোস্পি সূচকও কমেছে।
তবে, চীনের শেয়ার বাজার কিছুটা স্থিতিশীল ছিল, যেখানে হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক বৃদ্ধি পেয়েছে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে থাকে, তাহলে চীনও এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন সতর্ক করে বলেছেন, এই শুল্ক নীতির কারণে একজন সাধারণ আমেরিকান পরিবারের বছরে প্রায় ৪ হাজার ডলার অতিরিক্ত খরচ হতে পারে। তিনি একে একটি “ভয়ংকর আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত” হিসেবেও উল্লেখ করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বাণিজ্য যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়। এর কারণ, বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাঘাত ঘটতে পারে, যা বিশ্বজুড়ে পণ্যের দাম বাড়াতে পারে।
এছাড়া, বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।
যদিও এই বাণিজ্য যুদ্ধের সরাসরি প্রভাব এখনো বাংলাদেশে সেভাবে পড়েনি, তবে বিশ্ব অর্থনীতির এই অস্থিরতা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে।
বিশেষ করে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীলতা এবং বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বিদ্যমান বাণিজ্য চুক্তির কারণে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর কিছু পরোক্ষ প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ব অর্থনীতির এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিষয়ক উপদেষ্টা পিটার নাভারো অবশ্য এই দরপতনকে “স্বাভাবিক” বলে মন্তব্য করেছেন।
তবে, বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বাণিজ্য যুদ্ধের এই পরিস্থিতি দীর্ঘ সময় ধরে চললে তা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য আরও বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে।
তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা