খেলাধুলায় একজন ট্রান্সজেন্ডার নারীর কি কোনো সুবিধা থাকে? এই প্রশ্নটি এখন বিশ্বজুড়ে, বিশেষ করে খেলাধুলার জগতে, বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সম্প্রতি, বিভিন্ন দেশে ট্রান্সজেন্ডার নারী ক্রীড়াবিদদের নারী বিভাগে অংশগ্রহণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
এই বিতর্কের মূল কারণ হলো, পুরুষ হিসেবে শরীরে বেশি টেস্টোস্টেরন থাকার কারণে, মেয়েবেলার শরীর নিয়ে বেড়ে ওঠা একজন নারীর চেয়ে, ট্রান্স নারী প্রতিযোগিতায় সুবিধা পেতে পারেন। তবে, বিজ্ঞান এখনো এই বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি।
পুরুষদের শরীরে স্বাভাবিকভাবেই টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বেশি থাকে, যা তাদের পেশীশক্তি এবং শারীরিক গঠনে প্রভাব ফেলে। বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেদের শরীরে এই হরমোনের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়, যা তাদের শরীরে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটায়।
এই পরিবর্তনের ফলে, ছেলেদের হাড়ের ঘনত্ব বাড়ে, উচ্চতা বৃদ্ধি পায় এবং পেশীও শক্তিশালী হয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই শারীরিক বৈশিষ্ট্যগুলো খেলাধুলায় একটা সুবিধা তৈরি করতে পারে।
অন্যদিকে, ট্রান্স নারীরা তাদের লিঙ্গ পরিচয়কে প্রকাশ করতে হরমোন থেরাপির সাহায্য নেন। এই থেরাপির মাধ্যমে শরীরে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমানো হয় এবং মেয়েলি বৈশিষ্ট্যগুলো ফুটিয়ে তোলা হয়।
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, হরমোন থেরাপির কারণে ট্রান্স নারীদের শারীরিক শক্তিতে পরিবর্তন আসে এবং অনেক ক্ষেত্রে তারা cisgender নারীদের কাছাকাছি চলে আসেন। তবে, এই পরিবর্তন কতটা স্থায়ী, তা নিয়ে এখনো বিজ্ঞানীদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে।
এই বিতর্কের কারণ হলো, খেলাধুলায় সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা। ট্রান্স নারী ক্রীড়াবিদদের অংশগ্রহণের ফলে, cisgender নারীদের সুযোগ কমে যেতে পারে বলে অনেকে মনে করেন।
আবার, ট্রান্স নারীদের অধিকারকর্মীরা বলছেন, বিজ্ঞান এখনো পর্যন্ত এমন কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি, যা প্রমাণ করে যে ট্রান্স নারীরা সবসময়ই cisgender নারীদের চেয়ে বেশি সুবিধা পান।
বিভিন্ন ক্রীড়া সংস্থা, যেমন – আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) এবং ন্যাশনাল কলেজিয়েট অ্যাথলেটিক অ্যাসোসিয়েশন (এনসিএএ) এই বিতর্কের সমাধান করার চেষ্টা করছে। তারা ট্রান্সজেন্ডার অ্যাথলেটদের অংশগ্রহণের জন্য নতুন নিয়ম তৈরি করছে।
তবে, এই নিয়মগুলো তৈরি করা বেশ কঠিন, কারণ প্রত্যেক খেলার ধরন আলাদা এবং প্রতিটি খেলোয়াড়ের শারীরিক ক্ষমতাও ভিন্ন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বিতর্কের সমাধান শুধু বিজ্ঞানের মাধ্যমে সম্ভব নয়। খেলার মাঠে সবার জন্য ‘ন্যায্যতা’ কেমন হবে, সেই বিষয়ে সবার একটি সাধারণ ধারণায় পৌঁছানো দরকার। বিজ্ঞান অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে।
খেলার মূল উদ্দেশ্য কি – এই প্রশ্নটিও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্য সূত্র: সিএনএন