যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে ট্রান্সজেন্ডার ক্রীড়াবিদদের নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি হতে চলেছে, যা নারী ক্রীড়াঙ্গনে তাদের অংশগ্রহণের অধিকারের বিষয়টি নির্ধারণ করবে। এই মামলার রায় শুধু খেলাধুলার ক্ষেত্রেই নয়, বরং বৃহত্তর অর্থে লিঙ্গ পরিচয় এবং অধিকারের প্রশ্নে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।
পশ্চিম ভার্জিনিয়া এবং ইডাহো রাজ্যে ট্রান্সজেন্ডার নারী ও মেয়েদের মেয়েদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যে আইন তৈরি করা হয়েছে, তারই বিরুদ্ধে এই মামলাগুলো দায়ের হয়েছে। আদালত এখন এই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবে। এই মামলার রায় দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস এবং বিচারপতি নীল গোরসাচের মতামত বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
কারণ অতীতে তাঁরা উভয়েই এলজিবিটিকিউ+ অধিকার বিষয়ক মামলায় তাঁদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। আদালতের এই সিদ্ধান্তের কেন্দ্রে রয়েছে দুটি রাজ্যের আইন, যেখানে মেয়েদের খেলাধুলায় ট্রান্সজেন্ডার নারী ও মেয়েদের অংশগ্রহণে বাধা দেওয়া হয়েছে।
এই আইনগুলোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের হওয়া মামলাগুলো মূলত খেলাধুলায় অংশগ্রহণের অধিকারের প্রশ্ন তোলে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই মামলাগুলোতে আদালতকে ট্রান্সজেন্ডার অধিকারের মূল বিষয়গুলো সরাসরি বিবেচনা করতে হতে পারে। অতীতে আদালত একটি মামলায় সরাসরি এই বিষয়গুলো এড়িয়ে গিয়েছিল।
তবে এবার খেলাধুলার মামলার ক্ষেত্রে তেমনটা করা কঠিন হবে। এই কারণে বিচারপতি রবার্টস এবং বিচারপতি গোরসাচের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাঁদের সিদ্ধান্তের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।
আদালতের শুনানিতে অন্যতম প্রধান বিষয় হবে, কিভাবে ‘বস্টক বনাম ক্লেটন কাউন্টি’ মামলার রায় প্রয়োগ করা হবে। ২০১৭ সালের এই মামলায় আদালত রায় দেয় যে, কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গের ভিত্তিতে বৈষম্য করা হলে, তা আসলে যৌনতার ভিত্তিতে বৈষম্য হিসেবেই গণ্য হবে।
যদিও এই যুক্তির প্রয়োগ কর্মক্ষেত্রের বাইরে বিস্তৃত হয়েছে কিনা, সেই বিষয়ে এখনো বিতর্ক রয়েছে। এই মামলার রায় শুধু খেলাধুলার ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে না।
এর মাধ্যমে ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিদের অধিকার এবং সমাজে তাঁদের অবস্থান কেমন হবে, সেই বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পাওয়া যাবে। এই রায়ের ফলস্বরূপ অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়তে পারে। যেমন, বিদ্যালয়ে ট্রান্সজেন্ডার শিক্ষার্থীদের অধিকার, স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদি বিষয়গুলোও নতুন করে আলোচনার জন্ম দিতে পারে।
পশ্চিম ভার্জিনিয়া এবং ইডাহোর আইনপ্রণেতারা মনে করেন, এই ধরনের আইন নারীদের খেলাধুলার সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো এবং ট্রান্সজেন্ডার অধিকারকর্মীরা এই ধরনের আইনের বিরোধিতা করছেন।
তাঁদের মতে, এটি বৈষম্যমূলক এবং ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের সদস্যদের প্রতি অন্যায় আচরণ করা হচ্ছে। এই মামলার রায় সম্ভবত ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ অথবা ২০২৬ সালের শুরুতে ঘোষণা করা হবে।
এই রায়ের মাধ্যমে শুধু আমেরিকায় নয়, সারা বিশ্বের মানবাধিকার এবং লিঙ্গ-পরিচয় বিষয়ক বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তথ্য সূত্র: সিএনএন