ভ্রমণে অর্থ সাশ্রয়ের কার্যকরী উপায় বর্তমান সময়ে ভ্রমণ একটি জনপ্রিয় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে এর চাহিদা বাড়ছে।
অন্যদিকে যেমন ভ্রমণের আনন্দ, তেমনই রয়েছে অতিরিক্ত খরচের চিন্তা। টিকিট, হোটেল, ঘোরাঘুরির খরচ তো আছেই, সাথে লাগে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের কেনাকাটা।
তাই ভ্রমণকে আরও সাশ্রয়ী করতে কিছু কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে। আসুন, জেনে নিই কীভাবে ভ্রমণের খরচ কমানো যায়:
১. পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি: ভ্রমণে বের হওয়ার আগে একটি সুচিন্তিত পরিকল্পনা তৈরি করা খুবই জরুরি। গন্তব্য, ভ্রমণের সময়, বাজেট ইত্যাদি বিষয়গুলো আগে থেকে ঠিক করে রাখলে অনেক অপ্রত্যাশিত খরচ কমানো সম্ভব।
- ভ্রমণের স্থান নির্বাচন: কম খরচে ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন সুন্দর স্থান নির্বাচন করতে পারেন, যেমন – কক্সবাজার, সুন্দরবন, সিলেট।
- আগে থেকে টিকিট বুকিং: ট্রেনের টিকিট অথবা বিমানের টিকিট আগে থেকে কাটলে অনেক সময় ভালো ছাড় পাওয়া যায়।
- আবাসন: হোটেল বা রিসোর্টের পরিবর্তে হোস্টেল, গেস্ট হাউজ অথবা হোম স্টে-তে থাকার ব্যবস্থা করতে পারেন। এতে খরচ অনেক কম হয়।
২. প্যাকেজিংয়ের টিপস: ভ্রমণের সময় লাগেজ বা ব্যাগের ওজনের দিকে খেয়াল রাখা জরুরি। অতিরিক্ত ওজনের কারণে অনেক সময় বাড়তি চার্জ দিতে হয়। তাই কিছু কৌশল অবলম্বন করে লাগেজকে হালকা রাখা যায়:
- মাল্টি-পারপাস ব্যাগ ব্যবহার করুন: এমন একটি ব্যাগ নিন যা একই সাথে হ্যান্ড-ক্যারি, শপিং এবং ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য কাজে লাগে। এতে আলাদা ব্যাগ কেনার খরচ বাঁচে।
- ছোট আকারের প্যাকিং কিউব: পোশাক এবং অন্যান্য জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখতে প্যাকিং কিউব ব্যবহার করতে পারেন। এতে জায়গা সাশ্রয় হয় এবং জিনিসপত্র খুঁজে পাওয়া সহজ হয়।
- প্রয়োজনীয় জিনিস নিন: অপ্রয়োজনীয় জিনিস নেওয়া থেকে বিরত থাকুন। ভ্রমণের সময় আপনার প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর একটি তালিকা তৈরি করুন।
৩. খাবার ও পানীয়র ব্যবস্থা: ভ্রমণে খাবারের খরচ কমানো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এতে কিছু বুদ্ধি খাটালে অনেক টাকা বাঁচানো যেতে পারে:
- নিজের খাবার তৈরি করুন: বাইরে খাবার খাওয়ার পরিবর্তে কিছু শুকনো খাবার সঙ্গে নিন। যেমন – বিস্কুট, ফল, বাদাম ইত্যাদি।
- পানীয় জলের বোতল: বাইরে থেকে বোতলজাত জল কেনার পরিবর্তে একটি রিইউজেবল ওয়াটার বটল ব্যবহার করুন।
- স্থানীয় খাবার: গন্তব্যের স্থানীয় খাবার চেখে দেখতে পারেন। এতে একদিকে যেমন স্থানীয় সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা যায়, তেমনই খাবারের খরচও অনেক কম হয়।
৪. স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা: ভ্রমণের সময় স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তার দিকে খেয়াল রাখা অপরিহার্য। কিছু প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম সঙ্গে রাখলে অনেক সুবিধা পাওয়া যায়:
- ফার্স্ট-এইড কীট: ছোটখাটো আঘাত বা অসুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র ও ব্যান্ডেজ সঙ্গে রাখুন।
- স্বাস্থ্যকর খাবার: ভ্রমণের সময় স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
- স্থানীয় নিয়মকানুন: গন্তব্যের স্থানীয় নিয়মকানুন সম্পর্কে জেনে নিন এবং তা মেনে চলুন।
৫. স্মৃতি ধরে রাখা: ভ্রমণের স্মৃতিগুলো ধরে রাখার জন্য কিছু সৃজনশীল উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে।
- জার্নাল ও স্ক্র্যাপবুক তৈরি করুন: ভ্রমণের সময় ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা, অভিজ্ঞতা, ছবি, টিকিট ইত্যাদি জার্নালে লিখে রাখতে পারেন অথবা স্ক্র্যাপবুকে সাজিয়ে রাখতে পারেন।
- ডিজিটাল ফটোগ্রাফি: ছবি তোলার মাধ্যমে ভ্রমণের স্মৃতিগুলো ধরে রাখা যায়।
- স্থানীয় জিনিস: ভ্রমণের স্থান থেকে কিছু স্মৃতিচিহ্ন (যেমন – শোপিস, স্থানীয় হস্তশিল্প) সংগ্রহ করতে পারেন। তবে অতিরিক্ত খরচ করা থেকে বিরত থাকুন।
৬. অন্যান্য টিপস:
- স্থানীয় বাজার থেকে কেনাকাটা করুন: পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে জিনিসপত্রের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। স্থানীয় বাজার থেকে কেনাকাটা করলে খরচ কম হয়।
- সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করুন: ভ্রমণের সময় কোথায় কি করবেন, সে সম্পর্কে তথ্য জানতে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে পারেন।
- গ্রুপ ট্যুর: বন্ধুদের সাথে অথবা গ্রুপ ট্যুরে গেলে খরচ ভাগাভাগি করে নেওয়া যায়।
ভ্রমণে অর্থ সাশ্রয়ের এই উপায়গুলো অবলম্বন করে আপনি আপনার ভ্রমণের অভিজ্ঞতাকে আরও আনন্দদায়ক করে তুলতে পারেন এবং একই সাথে আপনার বাজেটও নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক