বিশ্বজুড়ে ভ্রমণের স্বপ্ন অনেকেরই থাকে, কিন্তু কিছু মানুষের জন্য এই স্বপ্ন পূরণ করা বেশ কঠিন। যাদের মারাত্মক খাদ্য এলার্জি আছে, তাদের জন্য ভ্রমণের সময় অনেক সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।
মিরান্ডা মুলিংস নামের একজন লেখক ও সম্পাদক বাদাম থেকে হওয়া তীব্র এলার্জি নিয়ে জন্ম গ্রহণ করেছেন। এই এলার্জি থাকা সত্ত্বেও, তিনি কীভাবে বিশ্বজুড়ে নিরাপদে ভ্রমণ করেন, সেই গল্প শুনুন।
ছোটবেলা থেকেই মিরান্ডার বাদামের প্রতি তীব্র এলার্জি ছিল। সামান্য বাদাম শরীরে লাগলেই তার শ্বাসকষ্ট শুরু হতো। এই এলার্জি এতটাই মারাত্মক যে, বাদাম খেলে তার জীবনহানির ঝুঁকি থাকে।
একবার একটি রেস্টুরেন্টে বাদামের উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পরেও তিনি মারাত্মক প্রতিক্রিয়ার শিকার হয়েছিলেন।
মিরান্ডা যখন ছোট ছিলেন, তখন শিশুদের মধ্যে খাদ্য এলার্জি এত পরিচিত ছিল না। তাই, বাইরের দেশে ভ্রমণে গেলে তাকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো।
বিশেষ করে ভাষার কারণে অনেক সময় তার এলার্জির কথা বোঝাতে সমস্যা হতো।
ভিসা পাওয়ার পর, তিনি যখন প্রথমবার কানাডার কুইবেক শহরে ভ্রমণে যান, তখন সেখানকার স্থানীয়দের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভাষার সমস্যা একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। খাবারের দোকানে তার এলার্জির কথা বুঝিয়ে বলতে বেশ বেগ পেতে হয়।
এর পরে, তিনি একটি বুদ্ধি বের করেন। তিনি একটি কার্ড তৈরি করেন, যেখানে “আমি বাদাম এবং গাছের বাদামে এলার্জিক” কথাটি লিখে রাখতেন। এরপর রেস্টুরেন্টে যাওয়ার সময় সেই কার্ডটি দেখিয়ে তিনি খাবার অর্ডার করতেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন, মিরান্ডাকে পড়াশোনার জন্য ইতালির রোমে যাওয়ার সুযোগ হয়। প্রথমে তিনি খুব চিন্তিত ছিলেন, কারণ সেখানকার খাবার সম্পর্কে তার তেমন ধারণা ছিল না।
কিন্তু সেখানে গিয়ে তিনি দেখেন, ইতালিতে বাদামের ব্যবহার খুব বেশি হয় না, বিশেষ করে মূল খাবারগুলোতে। ফলে, তার জন্য সেখানে ভ্রমণ করা তুলনামূলকভাবে সহজ ছিল।
তবে সব জায়গায় যে একই রকম অভিজ্ঞতা হবে, তা নয়। একবার ইতালির একটি স্থানে, তিনি এমন একটি রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলেন, যেখানে কর্মীদের সঙ্গে তার ভাষার সমস্যা ছিল।
খাবারের উপাদান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে না পারায় তিনি খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে যান এবং এক পর্যায়ে তার প্যানিক অ্যাটাক হয়।
মিরান্ডা মনে করেন, এলার্জি থাকলে ভ্রমণের সময় কিছু সীমাবদ্ধতা মেনে চলতে হয়। যেখানে বাদামের ব্যবহার বেশি, সেই সব জায়গায় যাওয়াটা তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি সবসময় চেষ্টা করেন, নতুন কিছু করার এবং সেই সঙ্গে নিজের স্বাস্থ্যকেও গুরুত্ব দিতে। বিমানে ভ্রমণের সময় তিনি নিজের খাবার সঙ্গে নিয়ে যান।
এলার্জি আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য ভ্রমণের সময় কিছু বিষয় মনে রাখা জরুরি। প্রথমত, গন্তব্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, স্থানীয় ভাষা সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে, অথবা একটি অনুবাদ করা কার্ড সঙ্গে রাখতে হবে।
তৃতীয়ত, সব সময় নিজের সঙ্গে এলার্জির ওষুধ (এপিপেন) রাখতে হবে। চতুর্থত, খাবারের উপাদান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রশ্ন করতে দ্বিধা করা উচিত না।
সবশেষে, নিজের শরীরের কথা শোনা এবং প্রয়োজনে ভ্রমণ পরিকল্পনা পরিবর্তন করতে প্রস্তুত থাকতে হবে।
মিরান্ডার অভিজ্ঞতা আমাদের দেখায়, খাদ্য এলার্জি থাকলেও ভ্রমণের স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব। শুধু প্রয়োজন কিছু বাড়তি সতর্কতা, সচেতনতা এবং আত্মবিশ্বাস।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লিজার